বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের দিন থেকে দেশ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে চলবে বলে দলের নেতাদের কাছ থেকে আসা বক্তব্য নিয়ে কটাক্ষ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বিভাগীয় সমাবেশ শেষ হয়ে পাওয়ার পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর নাকি খালেদা জিয়া দেশ চালাবেন, কোথায় গেল সেই অহংকার? বাংলাদেশের জনগণ আপনাদের দম্ভ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে।’
১০ ডিসেম্বরের এই সমাবেশ নিয়ে আগের দুই মাস ধরেই রাজনীতিতে ছিল নানা আলোচনা। সেদিন বড় ঘোষণা আসবে, এমন কথা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল দিনের পর দিন। আর দিনটি ঘিরে সরকার ও আওয়ামী লীগের প্রস্তুতিও ছিল ব্যাপক।
কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে পুলিশ, বিএনপির কর্মসূচির দিন ঢাকায় এলাকায় এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও।
জনসভাস্থল নিয়ে আগের কয়েক দিন ধরে দুই পক্ষে বিরোধের মধ্যে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষও হয়ে যায়। প্রাণ হারায় একজন।
বিএনপি সমাবেশটি করতে চেয়েছিল দলীয় কার্যালয়ের সামনে। পুলিশ অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সংঘর্ষের পরদিনও বিএনপি অনড় মনোভাব দেখায়। পরে গ্রেপ্তার হন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এরপর নাটকীয়ভাবে সমাবেশের স্থল ঠিক হয় ঢাকার এক প্রান্ত সায়েবাদাব লাগোয়া গোলাপবাগ মাঠ। উত্তেজনা থাকলেও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয় সমাবেশ। সেখান থেকে বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগ ছাড়া এমন কোনো ঘোষণাও আসেনি। পুরোনো দাবিগুলোকে একসঙ্গে ১০ দফায় তুলে ধরে মিছিলের মতো নমনীয় কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে।
তবে বিএনপির ঘোষণা ছিল অন্য রকম। গত ৮ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় দলের ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘এই বাংলাদেশ চলবে না, এই বাংলাদেশ চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে চলবে বেগম খালেদা জিয়ার কথায় ও দেশনায়ক তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কোনো দেশ চলবে না কারও কথায়।
‘ভায়েরা প্রস্তুতি নিন, ওই কাঁচপুর ব্রিজ, ওই টঙ্গী ব্রিজ, এই দিকে মাওয়া রোড, ওই দিকে আরিচা রোড, সারা বাংলাদেশ, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া কর্মসূচি আসছে। সারা বাংলাদেশ বন্ধ করে দেব।’
দুই দিন পর লক্ষ্মীপুরে বিএনপির এক সমাবেশে দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। ১০ তারিখের পর দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ চলবে। আর কোনোভাবে ছাড় দেয়া হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুব শিগগির তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসবেন। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। অনতিবিলম্বে তাদের সব মামলা প্রত্যাহার ও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।’
‘যাদের হাতে রক্ত, তারা করবে রাষ্ট্র মেরামত!’
১০ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার পর বিএনপি নেতারা বলছেন রাষ্ট্র মেরামতের কথা। যুব মহিলা লীগের সম্মেলনে এসে তারও জবাব দেন কাদের।
আওয়ামী লীগের নেতা বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা বলেছেন, ‘রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা তৈরি করছেন, ঘোষণা দেবেন। এটা বিএনপি তৈরি করবে? যাদের হাতে ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ২১ আগস্টের রক্তের দাগ, তারা করবে রাষ্ট্র মেরামত?’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার থেকে দায়মুক্তি দিয়ে জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের অংশ করা নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতা।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মুক্তি দিতে যারা আমাদের সংবিধান সংশোধন করেছে। ৫ বার যারা দুর্নীতিতে বাংলাদেশকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন করেছে, তারা করবে রাষ্ট্র মেরামত?
‘যারা আমাদের দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে, যারা দণ্ডিত হয়েছে, তারা করবে রাষ্ট্র মেরামত?’
তারেক রহমানের কথা তুলে কাদের বলেন, ‘মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে চলে গেছেন, তিনি হবেন আপনাদের নেতা?’
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট পলাশীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘পলাশীর মীর জাফর ও ইয়ার লতিফের জায়গায় ১৫ আগস্টে ছিল খুনি মোশতাক ও জিয়াউর রহমান।
‘পৃথিবীর ইতিহাসের কোনো হত্যাকাণ্ডে, কোনো অবলা নারী, অবুঝ শিশু টার্গেট হয়নি। কিন্তু ১৫ আগস্টে হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ছিল এটি।’
কাদের বলেন, `শেখ হাসিনা নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানিয়েছেন, একদিনে ১০০ সেতু উদ্বোধন। মেট্রোরেল উদ্বোধন হবে, চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেল হয়েছে। এ কারণে বড় জ্বালা, বিএনপির অন্তর্জ্বালা। জ্বালায় জ্বালায় মরে। কেন এগুলো হলো, কেন এগুলো করলেন? আর সেজন্যই গালগল্প বুলি আওড়াচ্ছেন।’
নির্বাচন এবং তার আগে বিরোধী দলের সম্ভাব্য আন্দোলন মোকাবিলা করতে যুব মহিলা লীগকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রস্তুত হয়ে যান। আবারও সংগ্রাম, আবারও আন্দোলন মোকাবিলা হবে। নির্বাচনে আবারও মোকাবিলা হবে।
‘যুব মহিলা লীগ রাজনীতিতে শেখ হাসিনার এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। রাজপথে নিপীড়ন, নির্যাতন, জেল জুলুমের ইতিহাস যুব মহিলা লীগের। আন্দোলন-সংগ্রামে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
যুব মহিলা লীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে ও অপু উকিলের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
সম্মেলন শেষে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে আলেয়া ডেইজি সারোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শারমিন সুলতানা লিলির নাম ঘোষণা করা হয়।