বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পিটার হাসের কাছে ‘আরও সুবিবেচনা’ প্রত্যাশা তথ্যমন্ত্রীর

  •    
  • ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৫:৩২

‘আমি জানি না তাকে কে পরামর্শ দিয়ে সেই দিনে মায়ের ডাক নামের সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যেতে। যারাই এ পরামর্শ দিয়েছে, তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। আমি মনে করি, যেই পরামর্শ দিক, সিদ্ধান্ত তো নিজের। কাজেই উনারও আসলে দিবসের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল।’

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে ‘মায়ের ডাক’ নামে সংগঠনের সমন্বয়কের বাসায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে বিতর্কিত করা হয়েছে বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি এও বলেছেন, পরামর্শ যেই দিক, যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূত নিয়েছেন। তারও দিবসটির দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত ছিল।

বুধবার পিটার হাস নয় বছর আগে রাজধানীতে নিখোঁজ এক বিএনপি নেতার বাসায় যাওয়ার পর সেখানের ঘটনাবলী নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

নিজ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মতোই হাছান বলেছেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পিটার হাস যদি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যেতেন, তাহলে তিনি খুশি হতেন। পাশাপাশি সুমনের বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল যারা মান্যবর মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে গেছেন, তারা তাকে বিতর্কিত করেছেন। এখানে বিতর্কিত করা সমীচিন হয়নি।

‘গতকাল ছিল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। এদিন সবাই শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক সময় বিদেশি রাষ্ট্রদূতরাও সেখানে শ্রদ্ধা জানান। গতকাল সেই দিনে যদি রাষ্ট্রদূত শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যেতেন তাহলে সেটি অনেক ভালো হতো এবং বাঙালি জাতির যে স্বাধীনতা এবং এই স্বাধীনতা অর্জন করতে গিয়ে যে বাঙালি জাতির যে কষ্ট-ত্যাগ সেটার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো।

‘আমি জানি না তাকে কে পরামর্শ দিয়ে সেই দিনে মায়ের ডাক নামের সংগঠনের কো-অর্ডিনেটরের বাসায় যেতে। যারাই এ পরামর্শ দিয়েছে, তারা সঠিক পরামর্শ দেয়নি। আমি মনে করি, যেই পরামর্শ দিক, সিদ্ধান্ত তো নিজের। কাজেই উনারও আসলে দিবসের দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার ছিল।’

বুধবারের ঘটনায় আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে কোনো অবনতি হবে না বলেই বিশ্বাস করেন তথ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী। আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রায় তাদেরও বিরাট ভূমিকা আছে। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ।

‘আমি মনে করি, এ ঘটনায় সম্পর্কে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। মার্কিন দূতকে আমি অনুরোধ করব, তাকে যদি কেউ ভুল পরামর্শ দেয়, তাকে যদি এভাবে একপেশে করে তোলার চেষ্টা করে, সেটির বিষয়ে সতর্ক থাকার অনুরোধ তাকে জানাব।’

যা ঘটেছিল বুধবার

২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও পেট্রল বোমা হামলার মধ্যে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় বুধবার যান পিটার হাস। সুমনের বোন ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। গত কয়েক বছরে নিখোঁজদের স্বজনরা এই সংগঠনে আছেন। তারা প্রায়ই নানা কর্মসূচি পালন করে সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন।

পিটার হাস হঠাৎ করেই সুমনের বাড়ি যাওয়ার বিষয়টি পছন্দ করেনি সরকার। তা গোপনও রাখা হয়নি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বিএনপি খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত।’

একই আলোচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পিটার হাসের কাছে জানতে চান, আমেরিকায় মাসে কত গুম, খুন ধর্ষণ হয়।

সুমনের বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে যায় ‘মায়ের কান্না’ নামে আরও একটি সংগঠনের সদস্যরা। ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনা ও বিমানবাহিনীকে হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা গড়ে তুলেছেন এই সংগঠন। তারা জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচার এবং তাদের স্বজনদের সঙ্গে হয়ে যাওয়া অন্যায়ের ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন।

পিটার হাসকে এই সংগঠনের সদস্যরা একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন। এতে ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা আন্তর্জাতিক তদন্ত চাওয়ার পাশাপাশি সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়।

পিটার ডি হাস সুমনের বাসায় যাওয়ার পর সেখানে হাজির হয় মায়ের কান্না নামে সংগঠনের সদস্যরা। তারা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে একটি স্মারকলিপি দেয়ার চেষ্টা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের কাছে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের প্রটোকল অফিসাররা তাদেরকে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি। তারা হাসকে নিয়ে দ্রুত ত্যাগ করেন ঘটনাস্থল।

এরপর যুক্তরাষ্ট্রের দূত সোজা চলে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে গিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশ করেন উদ্বেগ।

মোমেন তখন তার কাছে জানতে চান, কোনো হামলা হয়েছে কি না। ‘না’ জবাব আসার পর তিনি প্রস্তাব দেন নিরাপত্তা বাড়াতে। তবে এটি জানিয়ে দেন, কোনো সংগঠনের কর্মসূচি তারা আটকাতে পারেন না।

‘মায়ের কান্নার স্মারকলিপি নেয়া উচিত ছিল’

তথ্যমন্ত্রী মনে করেন, মায়ের কান্নার স্মারকলিপিটি ফিরিয়ে দেয়া উচিত হয়নি পিটার হাসের।

তিনি বলেন, ‘তিনি সেখানে গেছেন, এটি শুনে মায়ের কান্না সংগঠনের ৫০ জনের মতো গিয়েছিলেন। তারা গিয়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে স্মারকলিপি দিতে। যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তারা সে সুযোগ দেননি।

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

‘তারা (মায়ের কান্না) কথা বলতে চেয়েছিলেন, কথাও বলতে পারেননি। আমি মনে করি মার্কিন রাষ্ট্রদূত যদি তাদের স্মারকলিপিটা নিতেন এবং তাদের সঙ্গে দুকথা বলতেন তাহলে তার যাওয়া নিয়ে যে প্রচণ্ড সমালোচনা হচ্ছে সেটি হতো না।’

বিএনপি যে তাদের নেতা-কর্মীদের গুমের অভিযোগ আনছে, সেটিও মিথ্যা বলে দাবি করেন হাছান। বলেন, ‘যারা গুম হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তাদের অনেককেই আবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। অনেকে খুনের মামলার আসামি, অনেকে মাদক মামলার আসামি। তাদেরকে বিএনপি গুম হয়েছে বলে বিএনপি বলে বেড়াচ্ছে।’

বিএনপির সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবেন সেটি তারা বলতেই পারে। এটি বলা কোনো অপরাধ না। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদেরকে আর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেবে না।

‘যারা মানুষের উপর বোমা নিক্ষেপ করে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, যারা মানুষকে জিম্মি করে রাজনীতি করে তাদের ডাকে মানুষ সাড়া দেয়নি, দেবেও না। ১০ তারিখ সরকার পতন ঘটাতে এসে নিজেদের পতন ঘটিয়ে চলে গেছে।’

এ বিভাগের আরো খবর