‘দেশের জনগণ আগেই এ সরকারকে বাতিল করে দিয়েছে। এখন বিশ্ব তাদেরকে বাতিল করেছে। এই সরকারের বিদায় ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আর বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করা হবে।’
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এই ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘কোনোভাবেই বর্তমান সরকারের অধীনে হতে দয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত।’
১০ ডিসেম্বরের পূর্বঘোষিত সমাবেশের তিন দিন আগে নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এই প্রতিবাদ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘সরকার বিদেশিদের বলে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামাবেন না। আবার তারাই বিদেশিদের কাছে নালিশ করে। তাহলে বিদেশি দূতদের ডেকে চা-নাশতা খাইয়ে চিঠির পরিবর্তে চিঠি দিয়ে তাদের খুত ধরার কী দরকার?
‘ক্ষমতাসীনরা বিদেশিদের পেছনে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না, হবে না। দেশের জনগণ এই সরকারকে আগেই বাতিল করেছে। এখন বিশ্ব তাদের বাতিল করেছে। এই সরকারের বিদায় ছাড়া আর কোনো পথ নেই।’
তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য, আইনের শাসন ও বাক-স্বাধীনতার ফিরে পাওয়ার জন্য এই জনতা জীবন দিতে প্রস্তুত। এই জনতাকে রুখে দেয়া যাবে না।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা কেউ ৫০০ টাকা নিয়ে সমাবেশে এসেছেন? কোনো টাকা পাইছেন? পাননি। আমাদের সভা-সমাবেশে কাউকে টাকা দিয়ে আনা হয় না। আমাদের সমাবেশে যারা আসেন তারা দেশ ও মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আর অন্য দলের নেতারা বিরিয়ানি খাইয়ে, টাকা-পয়সা ও টি-শার্ট দিয়ে সমাবেশে লোক আনেন।’
আমির খসরু বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে তা গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষের কাছে কালো অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হবে। তারা লাঠিচার্জ, গুলি ও টিয়ার শেল ছুড়ে আমাদের নেতাকর্মীদের মেরে আহত করেছে। লুটপাট করেছে। অসভ্য আচরণ করেছে।
‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ছবি ভেঙে ফেলেছে। ওরা হিংস্র, হত্যাকারী। এই চেহারা এখন শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও উন্মোচিত হয়েছে। সরকার বিদেশি মিশনগুলোতে যা পাঠিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তারা দোষী না নির্দোষ তা জনগণের কাছে প্রমাণ হয়ে গেছে।’
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠার রাজনীতি করে। তারা মানুষ হত্যা করে। এভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে দেশের মানুষকে ঠেকানো যাবে না। এখনো বলছি শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিন। অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিন।’
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে লুটপাট চালিয়েছে সেভাবেই বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে নারকীয় তাণ্ডব ও লুটপাট চালিয়েছে। সরকারের অন্যায়-অত্যাচার ও দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে।’
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা গুটিকয়েক লোককে রক্ষার জন্য কোটি কোটি মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। গুটিকয়েক মানুষের স্বার্থরক্ষা না করে জনগণের পক্ষে থাকুন। বিচারকদের বলব—আপনার শপথ নিয়েছেন কিন্তু তা পালন করেননি। আল্লাহর কাছে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, রহুল কবির রিজভীসহ আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে সরকার ভেবেছিল আমাদের সমাবেশ পণ্ড করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের বোঝা উচিত, শেখ হাসিনা ও কাদেরের বোঝা উচিত যে বিএনপি ভেসে আছে আসেনি।
‘বিএনপি রাজপথ আছে। রাজপথে থাকবে। আমাদের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে। প্রয়োজনে হাজার হাজার নেতাকর্মী জীবন দেবে। আমরা জীবন দেয়ার জন্য প্রস্তুত। তবু আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনাকে বিদায় করা হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে আমান বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করছি, নিরপেক্ষ থাকুন। আপনারা আমাদের কোন কোন এলাকার নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছেন সেসবের তালিকা আছে। শেখ হাসিনা অবশ্যই ক্ষমতা থেকে নামবেন। তাই আপনারা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেড এম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমুদ্দিন আলম, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব প্রমুখ।