বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করলেও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সংসদে রয়ে গেছেন। বিএনপির প্রতীক না পেলেও তাদের সমর্থনে জয়ী মোকাব্বির খান এখনও এ বিষয়ে কিছু ভাবছেন না। বলেছেন, নিজের দল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে পরামর্শ করেই যা করার করবেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি তার ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট গড়ে। সেই জোটের শরিক ছিল ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম।
সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর গণফোরামের নেতা হিসেবে মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ঐক্যফ্রন্টে প্রার্থী হন। গণফোরাম তখন দলের প্রতীক উদীয়মান সূর্য না নিয়ে ধানের শীষ নিয়ে ভোট করার সিদ্ধান্ত নেয়।
অন্যদিকে মোকাব্বির ভোট করেন সিলেট-২ আসন থেকে। তবে তিনি ঐক্যফ্যন্টের ঘোষিত প্রার্থী ছিলেন না। সেই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। একেবারে শেষ মুহূর্তে তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
মোকাব্বির তখন দেশের বাইরে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এই অবস্থায় বিএনপির প্রার্থী-সংকটের কারণে তাকে থেকে যেতে বলা হয়। তবে সমর্থন দিলেও প্রতীক দেয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে গণফোরামের প্রতীকেই ভোট করেন তিনি।
চার বছর আগের সেই নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট ভোট প্রত্যাখ্যান করে সংসদে না যাওয়ার কথা বলতে থাকে। তবে এর মধ্যে সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির শপথ নেন। পরে অবশ্য বিএনপিও সংসদে যায়।
- আরও পড়ুন: পদত্যাগপত্র জমা বিএনপি এমপিদের
বিএনপির সে সময়ের শুরুর দিকের সিদ্ধান্তের মতোই দলটির পদত্যাগের সিদ্ধন্তেও একমত নন গণফোরামের দুই সংসদ সদস্য।১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে ঘোষণা দেয়ার পরদিন দলের ছয়জন সংসদ সদস্য স্পিকারে শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন। আরেক সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে আছেন। সেখান থেকে এসে জমা দেবেন পদত্যাগপত্র।
ধানের শীষ নিয়ে জেতা সুলতান মনসুরও কি পদত্যাগ করবেন- এই প্রশ্ন ছিল তার কাছে।
জবাবে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি কেন পদত্যাগ করব? আমি তো বিএনপির কেউ না। কৌশলগত কারণে গত নির্বাচনে বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করেছি। তবে আমি জাতির জনকের আদর্শের মানুষ। কাজেই পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না।’
এখনও নিজেকে আওয়ামী লীগারই মনে করেন দলটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘কোনো পদে না থাকলেও আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কার করেনি। আমিও আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি নিইনি।’
পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে রোববার সংসদ ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন রুমিন ফারহানাসহ বিএনপির এমপিরা
ঐক্যফ্রন্ট এখন আর নেই জানিয়ে সুলতান মনসুর বলেন, ‘আমরা ঐক্যফ্রন্ট করেছিলাম জাতির জনকের ঘনিষ্ঠ সহচর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে। বিএনপি ওই ঐক্যফ্রন্টে এসে যুক্ত হয়েছিল। নির্বাচনের পরই এই জোট অকার্যকর হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগও নেই।’
সুলতান মনসুরের কাছে যে জিজ্ঞাসা, সেই একই প্রশ্নে মোকাব্বির খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি এখনও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। দেশের পরিস্থিতি, আমার নির্বাচনি এলাকার জনগণ ও আমার দলের সঙ্গে আলাপ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
গত জাতীয় নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনকে নেতা মেনে জোট করলেও এখন তার সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও বসেনি ড. কামালের সঙ্গে।
গণফোরামেও এখন বিভেদ। সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টুকে সভাপতি করে একই নামে গঠন করা হয়েছে আরও একটি কমিটি। এই অংশের সঙ্গে বিএনপি আলোচনায় বসেছে। তবে মোকাব্বির আছেন ড. কামালের অংশে।
বগুড়া-৭ আসনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী গুলবাগী নামে পরিচিত রেজাউল করিম বাবলুও পদত্যাগ করছেন না। বিএনপির প্রার্থিশূন্য হয়ে যাওয়ার পর শেষ মুহূর্তে তাকে সমর্থন দেয় দলটি।