বাংলাদেশের কর্মীদের অনেকেই মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদের সর্বনিম্ন বেতনসীমা নির্ধারণে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ।
তিনি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে কোন দেশে সর্বনিম্ন কত বেতনে বাংলাদেশি কর্মীরা যাবে, সেটির চাহিদাপত্র তৈরির বিষয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়।’
রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে মঙ্গলবার দুপুরে ‘প্রত্যাশা প্রবাসীদের আশা’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী।
এ বছর বিদেশে ১১ লাখ কর্মী গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থবছর হিসাব করলে আমাদের মালয়েশিয়ায় যাওয়া ভালোভাবে শুরু হয়ে গেলে ১৫ থেকে ১৬ লাখ কর্মী হয়ে যাবে। মন্ত্রণালয় থেকে অ্যাসেসমেন্ট করা হচ্ছে, কোন কোন দেশে মিনিমাম কত স্যালারি হলে ডিমান্ড নোট গ্রহণ করব। আমরা একটা ফিগারে আসব।’
এ সময় মন্ত্রী সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের সঙ্গে অন্য দেশের কর্মীদের বেতনের যে পার্থক্য তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সৌদিতে আমাদের ওয়ার্কাররা পান ৮০০ রিয়াল আর অন্যান্য দেশের ওয়ার্কাররা পান ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রিয়াল। এখানে একটা বিষয়ে আমাদের গুরুত্ব দেয়া দরকার। আমাদের ওয়ার্কারদেরও দক্ষতা বাড়াতে হবে, এটা বিরাট দায়িত্ব।’
অভিবাসন ব্যয় প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী বলেন, ‘অভিবাসনটা ওয়ান ওয়ে প্রসেস না। দুই পক্ষ থেকে এটা হয়। কর্মী পাঠানো দেশ হিসেবে আমাদের একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা যে দেশে কর্মী পাঠাচ্ছি, সেখানে কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আমাদের লক্ষ্য মানুষ পাঠানো। অনেক ক্ষেত্রে রিজনেবল না হলেও আমাদের হজম করে নিতে হয়। আমাদের মানুষ তো যেতে হবে। এটাও কিন্তু আমাদের হিসাব করতে হবে।’
তাহলে কী সরকার বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় মেনে নিচ্ছে- এমন প্রশ্নে ইমরান আহমদ বলেন, ‘বাধ্য হয়ে না। এটা ওই দেশের যে সিস্টেম আছে, সেটা আমাদের অ্যাগ্রি করতে হচ্ছে। এর মধ্যেই অন্যায় যেন না হয়, সেদিকে আমরা নজর রাখছি।’
মন্ত্রী মালয়েশিয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় আমাদের এমওইউ (সমঝোতা স্মারক) মোতাবেক খরচ প্রায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু আমি শুনতেছি মালয়েশিয়ায় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা নিচ্ছে।’
অবৈধ রিক্রুট এজেন্সিকে হুঁশিয়ারি
মালয়েশিয়ায় যে পরিমাণ কর্মী যাচ্ছে তার চেয়ে প্রায় ২০ গুন কর্মীকে ভুয়া মেডিক্যাল করানো হচ্ছে- এ ব্যাপারে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে যেসব রিক্রুট এজেন্সি ভুয়া মেডিক্যাল ও অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা নিয়ে ইতোমধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমি সব লাইসেন্স বন্ধ করে দেব।
সোনারগাঁও হোটেলে সেমিনার ও চিত্র প্রদর্শনীর যৌথভাবে আয়োজন করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও ব্র্যাক।
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঢাকায় নিযুক্ত ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন ড. ব্রেন্ড স্পেনিয়ের বলেন, ‘প্রবাসীদের দেশের উন্নয়নে শক্তিশালী অবদান রয়েছে। চলতি বছর বাংলাদেশি প্রবাসীরা ২২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। তবে আমরা নিরাপদ অভিবাসন প্রত্যাশা করি। সে লক্ষ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে।’
ব্র্যাকের শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসনবিষয়ক পরিচালক সাফি রহমান খান বলেন, ‘প্রবাসীদের অবদান কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। করোনাকালেও প্রবাসীরা উল্লেখযোগ্য রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। প্রবাসীদের ফিরে আসার পরও কাজে যুক্ত করতে চাই আমরা। তাদের দক্ষতা উন্নয়নে ব্র্যাকের অনেক উদ্যোগও রয়েছে।’
বাংলাদেশে আইওএম চিফ অব মিশন আব্দুস সাত্তার ইসব বলেন, ‘নিরাপদ অভিবাসনের লক্ষ্যে প্রত্যাশা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৫ বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার সহযোগিতা করছে বলে আমরা ধন্যবাদ জানাই।’