বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিএনপির এমপি হারুনের পদত্যাগ এখনই নয়

  •    
  • ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ ১৭:৪০

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সোহেল তাজ তার পদত্যাগপত্র আরেকজনের মাধ্যমে পাঠালে গ্রহণ করেননি ওই সময়ের স্পিকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে সোহেল তাজ সশরীরে উপস্থিত হয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিএনপির সাত সংসদ সদস্য ই-মেইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠানোর কথা জানালেও ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কারণে’ বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি সংসদ সচিবালয়সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, কোনো এমপি ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠালেও সেটি গ্রহণের সুযোগ নেই। কেউ পদত্যাগ করতে চাইলে সশরীরে সংসদের স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।

বিএনপির সাত এমপির মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। ফলে ঘোষণা অনুযায়ী রোববার দলটির ছয় সদস্যের সামনে স্পিকারের কাছে সরাসরি পদত্যাগপত্র দেয়ার সুযোগ থাকলেও দেশে ফেরার আগে হারুনুর রশীদ এমপি পদ ছাড়তে পারছেন না।

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির সাত সংসদ সদস্যের পদত্যাগের সিদ্ধান্তের ঘোষণা আসে শনিবার ঢাকার সমাবেশ থেকে।

রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) সিরাজ এবং রুমিন ফারহানা এই ঘোষণা দেন।

সংবিধানের ৬৭(২) অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের প্রক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘কোন সংসদ-সদস্য স্পীকারের নিকট স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন, এবং স্পীকার- কিংবা স্পীকারের পদ শূন্য থাকিলে বা অন্য কোন কারণে স্পীকার স্বীয় দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হইলে ডেপুটি স্পীকার- যখন উক্ত পত্র প্রাপ্ত হন, তখন হইতে উক্ত সদস্যের আসন শূন্য হইবে।’

ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশে বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘এই সংসদে থাকা-না থাকার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের পদত্যাগপত্র ই-মেইলে পাঠিয়ে দিয়েছি। আজকে শনিবার ছুটির দিন। আগামীকাল (রোববার) সংসদ সদস্যরা স্পিকারের কাছে এই পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেবেন।’

বিএনপির সংসদ সদস্যদের পাঠানো ই-মেইল সংসদ সচিবালয় পেয়েছে কি না, এবং ই-মেইলে পাঠানো পদত্যাগ গ্রহণযোগ্য কি না, জানতে সচিব কে এম আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর একান্ত সচিব এম এ কামাল বিল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংসদ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির সংসদ সদস্যরা ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন কি না, বলতে পারব না। কারণ আজ (শনিবার) ছুটির দিন। সংসদ সচিবালয় এ দিন বন্ধ থাকে।’

ই-মেইলে পাঠানো পদত্যাগপত্র গ্রহণযোগ্য কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যিনি পদত্যাগ করতে চান, তাকে সশরীরে হাজির হয়ে মাননীয় স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।’

ই-মেইলে পাঠানো পদত্যাগপত্র কেন গ্রহণযোগ্য নয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংবিধানে এ বিষয়ে পরিষ্কার করে বলা আছে, সশরীরে হাজির হতে হবে। মাননীয় স্পিকার পদত্যাগপত্র পাওয়া মাত্রই ওই সংসদ সদস্যের আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। আর একজনের ই-মেইল আরেকজনও পাঠাতে পারেন। এ জন্য সশরীরে গ্রহণ করাটাই তো ভালো।’

সংসদ থেকে সোহেল তাজের পদত্যাগের প্রসঙ্গটি সামনে আনেন ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সোহেল তাজ তার পদত্যাগপত্র আরেকজনের মাধ্যমে পাঠালে তা গ্রহণ করেননি ওই সময়ের স্পিকার বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে সোহেল তাজ সশরীরে উপস্থিত হয়ে পদত্যাগ জমা দেন।

চলতি একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করছেন সাত সংসদ সদস্য। তারা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের মো. আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের মো. হারুনুর রশীদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের আবদুস সাত্তার, বগুড়া-৪ আসনের মো. মোশাররফ হোসেন, বগুড়া–৬ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান। আর আছেন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।

বিএনপির ঘোষণা অনুযায়ী তারা রোববার পদত্যাগপত্র জমা দিলে সংবিধান অনুযায়ী ৯০ দিনের শূন্য আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে হারুনুর রশীদ দেশের বাইরে থাকায় রোববার স্পিকারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা পড়ছে না।

সমাবেশ শেষে বিষয়টি নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে বগুড়া-৬ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম মো. সিরাজের সঙ্গে। তিনি বলছেন, বোরবার পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার বিষয়টি এখনও ‘পরিকল্পনার মধ্যে আছে’। স্পিকারের সাক্ষাৎ পাওয়া গেলে এটি ঘটতে পারে।

গোলাম মো. সিরাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কালকে (রোববার) আমাদের পদত্যাগ করার পরিকল্পনা আছে। সত্যি বলতে, এটা নির্ভর করছে স্পিকারের অ্যাভেইলেভিলিটির ওপর। উনি কখন অফিসে থাকবেন, সেটা জেনে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

অস্ট্রেলিয়ায় থাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি তো বিদেশে আছেন। কালকে আসতে পারবে না। ওনার দেরি হবে, উনি পরে পদত্যাগ করবেন।’

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ নিশ্চিত করেন দেশে ফেরার পর তিনি স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র দেবেন।

নিউজবাংলাকে ফোনে তিনি বলেন, ‘রোবাবার সবার (পদত্যাগপত্র) জমা দেয়ার কথা আছে। তবে আমি তো দেশের বাইরে আছি।’

কবে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে দেশে আসি।’

কবে দেশে ফিরতে পারেন প্রশ্ন করলে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি ২০ (ডিসেম্বর) তারিখ দেশে ফিরব।’

আসন শূন্য হলে উপনির্বাচন

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পদত্যাগের পর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হলো ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন দিতে হবে। এখনও পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের এক বছর সময় আছে। কাজেই ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে উপনির্বাচন দিতে হবে।’

তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ৯০ দিনের কম থাকলে উপনির্বাচন না দিলেও সংবিধানের কোনো ব্যত্যয় হতো না বলে জানান এই আইনজীবী।

তিনি বলেন, ‘যত দিন পর্যন্ত ৯০ দিন সময় থাকবে, তত দিন নির্বাচন দিতেই হবে। আর ৯০ দিন সময় যদি না থাকত, তাহলে নির্বাচন না দিলেও চলত। কারণ পার্লামেন্ট তো ভেঙেই যাবে। তেমন পরিস্থিতি হলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকত না। এখন যেহেতু ৯০ দিনের বেশি সময় আছে, নির্বাচন দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।’

বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের ঘোষণাকে দলটির রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, ‘তাদের সংখ্যাও এমনিতে কম। এটার একটা রাজনৈতিক ইমপ্যাক্ট হয়তো আছে।’

তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করলে বড় ধরনের সংকট হবে, তা নয়। কিন্তু কয়েকজন পদত্যাগ করলেও তো সংকটের একটা সূত্রপাত হয়। বলা যায়, রাজনৈতিক সংকটের সূত্রপাত হয়েছে, তারা পদত্যাগ করেছেন। ছোটো ছোটো সংকট আস্তে আস্তে বড় সংকট হয়ে দেখা দিতে পারে। এটা তো আর বলা যায় না, ভবিষ্যৎ কী হবে?’

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ১২ অক্টোবর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদও বলেন, বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে তাদের আসনগুলোতে উপনির্বাচন হবে।

এ বিভাগের আরো খবর