নয়াপল্টনে সংঘর্ষের পর বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে চাল-ডালের পাশাপাশি পুলিশের রান্না করা খিচুড়ি জব্দ করাকে চুরির সঙ্গে তুলনা করেছেন বিরোধী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেছেন, ‘তারা বলছেন, নয়াপল্টন থেকে চাল-ডাল খিচুড়িসহ অনেক কিছু উদ্ধার করেছেন। আসলে তারা নয়াপল্টন থেকে খিচুড়ি চুরি করেছেন।’
শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে গত বুধবারের সংঘর্ষ এবং পরবর্তী ঘটনা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে বিএনপি প্রতিটি বিভাগীয় শহরে ধারাবাহিকভাবে যে সমাবেশ করে আসছে, তার শেষ কর্মসূচি হিসেবে হলো এই জমায়েত।
বিএনপি এই সমাবেশটি করতে চেয়েছিল নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কিন্তু পুলিশ তাদের অনুমতি দেয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখানে না গিয়ে অনুমতি ছাড়াই নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়ার পর বুধবার পুলিশের সঙ্গে বাঁধে সংঘর্ষ।
সেই সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় বিএনপি কার্যালয় থেকে বেশ কিছু ককটেলের পাশাপাশি ১৬০ বস্তা চাল, ২ লাখ বোতল পানি ছাড়াও কয়েক ডেকচি রান্না করা খিচুড়ি জব্দ করার কথা জানায় পুলিশ।
বাহিনীটি জানায়, পার্টি অফিসের সামনে থেকে এক ট্রাক চালের বস্তা ও পার্টি অফিসের নিচতলার অস্থায়ী রান্নাঘর থেকে খিচুড়ি জব্দ করা হয়।
- আরও পড়ুন: বিএনপির কার্যালয় থেকে খিচুড়ি জব্দ
- আরও পড়ুন: চাল তো বিস্ফোরক নয়: ফখরুল
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম বলেন, ‘তারা গত কয়েকদিন ধরেই এখানে কর্মী জমায়েত করে রান্নার আয়োজন করে খাওয়াচ্ছিল। কিন্তু আজকে যে আয়োজন দেখলাম তাতে স্পষ্ট তারা আমাদের অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও নয়াপল্টনেই সমাবেশের প্রস্ততি নিচ্ছিল।’
রাজধানীর গোলাপবাগে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ছবি: নিউজবাংলা
গয়েশ্বর গত বুধবারের সেই সংঘর্ষ এবং এর আগে তাদের নয়টি বিভাগীয় সমাবেশের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। বলেন, ‘আগে জানতাম তারা ভোট চোর, এখন দেখি খিচুড়ি চোর।’
বিভাগীয় সমাবেশকে খেলা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আগে নয়টি খেলায় জয়লাভ করেছি। আজকের খেলায়ও জয় পেয়েছি। কারণ আমাদের এ সমাবেশ ঠেকাতে সরকার মামলা হামলা খুনসহ সবকিছুই করেছে।
‘আজ ঢাকায় সবকিছু বন্ধ কেন- এর জন্য সরকারই দায়ী। রাতে নয় আমরা সব কাজ দিনেই করি। আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ, শান্তির জন্য আমরা অস্ত্র হাতে লড়তেও জানি।’
এই সমাবেশ থেকে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা, দাবি আদায়ে বড় কর্মসূচিসহ নানা কথা বলছিলেন বিএনপির নেতারা। তবে পুরনো দাবিগুলোকে এক করে ১০ দফা ঘোষণা এবং আগামী ১৩ ও ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে মিছিলের মতো নমনীয় কর্মসূচিই দেয়া হয়। বরং বিএনপির সাত জন সংসদ সদস্যের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানানোটাই ছিল প্রধান ঘোষণা।
গয়েশ্বর বলেন, ‘আমি বলেছিলাম ১০ তারিখের গণসমাবেশ থেকে সরকারকে বলে দেয়া হবে আপনারা কোন পথে যাবেন। যদি না যান তবে আপনাদের বিদায়ের ব্যবস্থা করা হবে।
‘সংসদ থেকে যে সাতজন এমপি পদত্যাগ করেছেন তারা আমাদের এক একটি বোমা। সংসদে নিক্ষেপ করা এগুলোই আমাদের তাজা বোমা।’
রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনি মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নতুন একটি নির্বাচন দিন।’
সিইসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এখনও সময় আছে আপনি মানে মানে কেটে পড়েন।’
এই সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার ঘোষণা ছিল, ১০ ডিসেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে দেশ চলবে। দলের নারায়ণগঞ্জ শাখার এক নেতা বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বর তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছ থেকেই এই কথা তিনি শুনেছেন।
সমাবেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘তারেক রহমান আজ সশরীরে না থাকলেও তার ভয়ে কাঁপছে সরকার। সময় হলেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন।’
গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে উপস্থিত নেতা-কর্মীদের একাংশ
বাংলাদেশের মানুষ ভয় পায় না, তারা যুদ্ধ করতে যানে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, ‘তারা (জনগণ) গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল। গণতন্ত্রের জন্য বাংলাদেশের মানুষ আবার যুদ্ধ শুরু করেছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশে যুদ্ধ হয়েছে দাবি করে গয়েশ্বর বলেন, ‘আর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে কারাগারে গিয়েছিলেন আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। আজ তিনি গণতন্ত্রের জন্য বন্দি। আর সেই বন্দি গণতন্ত্র থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।’