বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। জামিন আবেদন নাকচ করে শুক্রবার বিকেলে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম।
এর আগে দুই নেতাকে নয়াপল্টনে ককটেল হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিমের আদালতে উপস্থাপন করে বিস্ফোরক মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুই নেতাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। অন্যদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন।
শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে বিএনপির শীর্ষ দুই নেতাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়।
এর আগে নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর ককটেল ছোড়ার অভিযোগের মামলায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখানোর কথা সাংবাদিকদের জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ।
ডিবিপ্রধান শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গত ৮ তারিখে পল্টন থানায় যে মামলাটি হয়েছে বিস্ফোরক আইনে, সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
‘পল্টন থানায় ৮ তারিখের (বৃহস্পতিবার) ১০ নম্বর মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিস্তারিত জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘পুলিশের ওপরে বর্বরোচিত যে হামলা হয়েছে, ককটেল নিক্ষেপ করেছেন এবং অনেক জানমালের ক্ষতি হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে...। তাদের অপরাধ হলো, উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করেছি।’
বিএনপির কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নজরদারিতে আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি। আর কেউ যদি এমন অপরাধ করেন, তারা আমাদের নজরদারিতে থাকবেন, তাদের বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নেব।’
মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাদের বাসা থেকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
বিএনপি পক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেছেন, ‘এই মামলার এজাহারের দুই জন আসামিকে ইতিমধ্যে জামিন দিয়েছে। এই মামলার এজাহারে যাদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তাদের বলেছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কর্মী। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মামলায় কোনো অপরাধ করেছে এমন কোনো কথা বলা হয় নাই।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় সিএমএম কোর্টের নিচে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘৭ তারিখের মামলায় ৯ তারিখ পর্যন্ত এই দুই দিনের কোনো বিষয় আসে নাই। আমরা আদালতকে বলেছি, মির্জা আব্বাস এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারা বয়স্ক মানুষ এবং অসুস্থ। ওষুধ ছাড়া তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন চলে না। আগামীকাল (শনিবার) একটি জনসভা আছে, সেখানে মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথি এবং মির্জা আব্বাস বিশেষ অতিথি। তারা শান্তিপূর্ণ রাজনীতি করে, ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন। তাই এজাহারে তাদের নাম নাই। তাই এই কথিত ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নাই।
‘যেহেতু এজাহারে আমানুল্লাহ আমান এবং আব্দুল কাদের ভূঁইয়ার নাম আছে, তাদেরকে জামিন দিয়েছেন, তাই এজাহারে যাদের নাম নাই তাদের জামিন দিয়ে দেন। এই বয়স্ক দুই মানুষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ যে ফরওয়ার্ডিং আদালতে পাঠিয়েছে, সেখানেও তাদের কোনো অভিযোগ নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুতরাং বোঝা যায়, এই ঘটনার সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। ১০ তারিখের সভাকে সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পুলিশকে ব্যবহার করে ফ্রাস্ট্রেটিং করতে চাচ্ছে। এই সরকার ভোটারবিহীন সরকার, তাদের ভয় হলো জনগণ একত্রিত হয়ে এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে তাদের যে কোনো সময় পতন হবে। সে জন্য তারা জনগণ দেখলেই ভয় পায়।
‘আদালত আমাদের বক্তব্য শোনার পরে এই পর্যায়ে জামিন নামঞ্জুর এই কথা বলে নেমে গেছেন।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘আমরা আদালতে বলেছি, ঘটনার সময় এই দুজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবৈধ কাজ করেছে। তারা পুলিশের উপর হামলা করেছে, ককটেল নিক্ষেপ করেছে। এতে জনদুর্ভোগ হয়েছে, মানুষ আহত হয়েছে।
‘এই প্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেয়া হয়েছিল। ৭ তারিখের ঘটনা কেন হয়েছিল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তদন্তনাধীন মামলায় পুলিশ যে কাউকে ডাকতে পারে। তাদের আলোচনার প্রেক্ষিতে হয়তো সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।
‘এ ঘটনার তারা পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং তারা উস্কানি দিয়েছে। তাদের উপস্থিতিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। বিএনপি অফিসের ভেতরে বোমা পাওয়া গেছে। ১৬০ বস্তা চাল, তেলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। এই ঘটনাগুলো তারা কেন ঘটিয়েছে, কী দুরভিসন্ধি তা উদঘাটন হওয়া দরকার।
‘এই মামলায় গতকাল কয়েকজনকে রিমান্ড দেয়া হয়েছে। আজকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের জামিন শুনানি হয়েছে। উভয় পক্ষকে শুনেছে আদালত। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে।’
এই দুজনের সম্পৃক্ততা থাকলে কেন রিমান্ড চাওয়া হলো না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেন রিমান্ড চাওয়া হলো না, এটার জবাব তো আমি দিতে পারব না। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।’
এ সময় সেখানে উপস্থিত মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আগামীকালের সমাবেশকে নস্যাৎ করার জন্যই সরকার তথাকথিত মামলা দিয়ে মহাসচিব ও মির্জা আব্বাসকে কারাগারে আটকে রেখেছে।’
আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘গতকাল বাসা থেকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞেসাবাদের জন্য নিয়ে এসে আজ পাতানো মামলায় তাদেরকে জামিন না দিয়ে কারাগারে আটকে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার আগামীকালের সমাবেশকে নস্যাৎ করার জন্যই তো মহাসচিব ও মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠিয়েছে, কিন্তু বিএনপি সমাবেশ করবেই।’