১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার সমাবেশের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে ছোট ছোট সাতটি রাজনৈতিক দল নিয়ে গড়া জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তোপখানা রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উসকানিমূলক আচরণের মধ্যে দিয়ে সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামীতে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সাথে যুগপৎ বৃহত্তর গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে গণতন্ত্র মঞ্চ।
১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জোটের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘গতকালকে ওই ঘটনার পরে আমরা নিজেরা নিজেদের মধ্যে কথা বলে এক সঙ্গে জড়ো হয়ে বিএনপি অফিসের দিকে গিয়েছি। আমাদের চিন্তা ছিল আমরা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে ওখানেই অবস্থান নিতাম। খুব স্বাভাবিকভাবে এত বড় ঘটনার পরে বিএনপি কী করছে, তা আমাদের দেখা দরকার।’
বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এত বড় ভয়াবহ ঘটনার পরে আমরা বলছি আমরা বিএনপির সঙ্গে আছি। এই জায়গাতে আমাদের সমর্থন নিরঙ্কুশ।’
১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে বুধবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যে ঘটনা, সে প্রসঙ্গে মান্না বলেন, ‘এই সামগ্রিক বিষয়টি বিএনপি কিন্তু নিজেরাই করেছে। আমাদের সঙ্গে মত বিনিময়ের মধ্য দিয়ে হয়নি। ফলে এটাকে তারা কীভাবে সম্প্রসারণ করবে, তার বিস্তারিত আমরা জানিও না এখনও।’
মান্না বলেন, ‘আমরা এই আন্দোলনকে বিজয়ের দিকে নিতে চাই, সেই প্রত্যাশায় বিএনপির সঙ্গে সহযোগিতা করব এবং ১০ তারিখ বিএনপির কর্মসূচিসহ আরও কয়েক দিনেও যদি লড়াইটা চলে তার সঙ্গে যুক্ত থাকব।’
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক খেলা হবে বলে একটি আগ্রাসী রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছেন। এরপর বুধবার কোনো উসকানি ছাড়া বিএনপির কার্যালয়ে যেভাবে হামলা, আক্রমণ ও লুট করা হয়েছে, যেভাবে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে পরিষ্কার হয়েছে যে সরকার ও সরকারি দলের খেলার অংশ হিসেবেই বিএনপি কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশ ১০ তারিখে। কিন্তু কোনো উসকানি ছাড়া তিন দিন আগে সরকার যেভাবে হামলা ও আক্রমণ করেছে, এ থেকে বোঝা যায় এটা সরকারের চূড়ান্ত নার্ভাসনেসের বহিঃপ্রকাশ।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সকল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির যুগপৎ লড়াইয়ের মাধ্যমেই অবৈধ ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। আমরা আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি। আগামীতে সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির সাথে যুগপৎ বৃহত্তর গণ আন্দোলন গড়ে তুলবে গণতন্ত্র মঞ্চ।’
লিখিত বক্তব্যে মান্না বলেন, ‘বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা, গুলি করে হত্যা, নৃশংস হামলা, গণ হারে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে সরকার দেশকে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে কেন্দ্র করে আমরা দেশবাসীর প্রতি সেই আহবান জানাই। গণতন্ত্র মঞ্চ অন্যান্য প্রগতিশীল, দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে সাথে নিয়ে সেই লড়াই সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, ‘গণসংহতি আন্দোলন ঢাকা মহানগর উত্তরের হাতিরঝিল থানার ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংগঠক হাসু মিয়াকে বুধবার মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কর্মীদের গণ হারে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তারা শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে সিদ্ধিরগঞ্জে নাগরিক ঐক্য এবং গণ অধিকার পরিষদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ জোটের নেতারা।