হুন্ডি, স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুই শতাধিক কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের মামলায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবু আহাম্মদ ওরফে আবুকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের আদেশের একদিন পর মামলার তদবিরকারক নুর মোহাম্মদকে তলব করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার এ আদেশ দেয়।
আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, তথ্য গোপন করে আদালতের সঙ্গে প্রতারণাকারী চট্টগ্রামের আবু আহাম্মদ ওরফে আবুর মামলার তদবিরকারক নুর মোহাম্মদকে তলব করেছে আদালত। ১২ ডিসেম্বর তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করায় মামলার আসামি আবুকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।
এদিনে আদালতে আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ফারিয়া বিনতে আলম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
মামলা থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৮ মার্চ সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জাপতনগর এলাকার ফয়েজ আহম্মদ ওরফে বালী সওদাগরের ছেলে আবু আহাম্মদ ওরফে আবুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে আসামিরা সংঘবদ্ধ হুন্ডি (অর্থ পাচার), স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসার মোট দুই শ’ চার কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার আট শ’ ৬৭ টাকা জমা ও দুই শ’ ৪০ কোটি পাঁচ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা উত্তোলন করে মানিলন্ডারিং অর্থাৎ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।
এছাড়া চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও, ফতেহনগর, রাউজান, ফটিকছড়িতে জমি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন। দুবাইতেও ২/৩টি দোকান রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রয়েছে।
এ মামলায় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান আবু আহাম্মদ। হাইকোর্ট তিন সপ্তাহের মধ্যে তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়।
এই নির্দেশের পর ২২ ফেব্রুয়ারি আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন দাখিল করেন। এই আবেদনের পর চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ নথি তলব করে ৫ মে জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য রাখেন।
কিন্তু চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি। এরপর ১৩ জুলাই দিন ধার্য রাখা হলেও নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি।
পরবর্তীতে ধার্য তারিখে নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপনপূর্বক ৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে আদালত।
এভাবে আরও কয়েকবার শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করেন আসামি। এসব আবেদন মঞ্জুর করে আদালত। ১৩ নভেম্বর আসামির সময় আবেদন না-মঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, গত ৯ মাস ধরে জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত দিয়ে আসছেন। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার শামিল।
এরপরই ওই আসামি পুনরায় হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান। জামিন আবেদনের তথ্য গোপন করে আদালতের সঙ্গে প্রতারণা করায় তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।