বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঋণখেলাপ: তদন্ত কমিটির সামনে ক্ষোভ ঝাড়লেন কৃষকরা

  •    
  • ৫ ডিসেম্বর, ২০২২ ২১:৩৪

ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে ব্যাংক মামলা করে। সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত ২৫ নভেম্বর ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। বিষয়টি নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।

বকেয়া ঋণ কারও ছিল ৪০০ টাকা, কারও ৯০০ টাকা। কেউ আবার পুরো টাকাই সুদসহ পরিশোধ করেছেন। তারপরও ঋণখেলাপের দায়ে জেল খাটতে হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীর ভাড়ইমারী গ্রামের কৃষকদের।

সোমবার ভাড়ইমারী গ্রামে অভিযুক্ত কৃষকদের বাড়ি বাড়ি অনুসন্ধানে গিয়ে এসব বিষয় জানতে পেরেছেন তদন্ত কমিটির তিন সদস্য। কয়েক কৃষক তাদের সামনে ক্ষোভও প্রকাশ করেন।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি বিলকিস নাহারের বাড়িতে যান তদন্ত দলের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেডের ডিজিএম (পরিদর্শন) আহসানুল গণির নেতৃত্বে এ কমিটিতে রয়েছেন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) আব্দুর রাজ্জাক ও সহকারী ব্যবস্থাপক (প্রকল্প ঋণ) আমিনুল ইসলাম রাজীব।

এ সময় উপস্থিত কৃষক আব্দুস সামাদ, মজনু প্রামানিক ও আতিয়ার রহমানের সঙ্গে তদন্ত দলের সদস্যরা কথা বলেন। পরে তারা ঋণখেলাপে অভিযুক্ত কৃষকদের বাড়িতে যান।

এ সময় কৃষকদের কাছে তারা জানতে চান- ঋণের টাকা তারা কেন পরিশোধ করেননি, ঋণের কিস্তি পরিশোধের রশিদ আছে কি-না এবং কার কাছে তারা কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন।

এ ছাড়াও মামলার আগে ব্যাংক তাদের ঋণ পরিশোধের কোনো নোটিশ দিয়েছিল কি-না।

তদন্ত দলের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ঋণের দায়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া ৩৭ কৃষকের মধ্যে আতিয়ার রহমান ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সুদসহ ৪৯ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। তার বকেয়া রয়েছে মাত্র ৪৩৩ টাকা। এরপরও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

মোছা. রহিমা বেগম নামে এক নারী কৃষক ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৪৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। তার বকেয়া রয়েছে ৯০০ টাকা।

মজনু প্রামাণিক নামে অপর একজন ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেছেন ৫৫ হাজার টাকা।

তদন্ত দল কৃষকদের কাছে ঋণ পরিশোধের তথ্য জানতে চাইলে কৃষকেরা তেমন কোনো রশিদ দেখাতে পারেননি। তবে তারা মুখে মুখে পরিশোধের হিসাব ও তারিখ জানান। সেসব তথ্য ব্যাংকের স্টেটমেন্টের সঙ্গেও মিলে যায়।

এ সময় কয়েকজন নিজেদের সামান্য বকেয়ার কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা তদন্ত দলের কাছে প্রশ্ন তোলেন- টাকা পরিশোধ করেও কেন জেল খাটতে হলো?

কৃষকদের এমন প্রশ্নে তদন্ত দলের সদস্যরা চুপ হয়ে যান।

গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগের শিকার কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, ‘সব টাকা পরিশোধ করেছি। তারপরও কেন আমাকে তিন দিন কারাগারে থাকতে হলো। এ দায়ভার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। আমাদের হয়রানি করা হয়েছে।’

কৃষক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘চল্লিশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে সুদসহ সমুদয় টাকা পরিশোধ করেছি। এরপরও কারাগারে যেতে হয়েছে। এজন্য ব্যাংক কর্মকর্তারা দায়ী। যদি ঋণ পরিশোধ না করে থাকি, তবে কেন আমাদের বিরুদ্ধে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়নি। উকিল নোটিশ পাঠালেই জানতে পারতাম ঋণ পরিশোধ হয়নি। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তা না করে সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না।’

ভাড়ইমারী উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি বিলকিস নাহার বলেন, ‘ব্যাংকের মাঠকর্মীরা এসে কৃষকের কাছ থেকে কিস্তি নিয়েছেন। কিস্তির টাকা তারা ব্যাংকে জমা দিয়েছেন কি-না জানি না। ব্যাংক আমার বিরুদ্ধেও চেক জালিয়াতির একটি মামলা করেছে। আমি সেই মামলায় নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছি।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহির মণ্ডল জানান, এলাকার ৩৭ জন কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলার বিষয়ে কোনো কৃষকই আগে জানতেন না। ঋণ পরিশোধের জন্য তাদের কোনো নোটিশও দেয়া হয়নি। তদন্ত কমিটির সদস্যরাও কৃষকদের বিরুদ্ধে মামলার আগে নোটিশ দেয়া হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

তদন্তকে লোক দেখানো বলেও মন্তব্য করেন মহির মণ্ডল।

এ প্রসঙ্গে তদন্ত দলের প্রধান আহসানুল গণি বলেন, ‘মূলত গ্রুপ ঋণের কারণেই সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখানে ব্যাংকের কিছু করার ছিল না। তবে যাদের কম টাকা বকেয়া, তাদের বাদ দেয়া যেত। এটা হয়তো ভুলবশত হয়েছে। পরবর্তীতে বিষয়টি দেখা হবে।’

১০ লাখ টাকা পরিশোধের পরও এত বকেয়া কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৫ শতাংশ সুদ হারে ঋণ দেয়া হয়েছিল। কিছু কৃষক টাকা পরিশোধ না করায় চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বেড়ে গেছে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ঈশ্বরদী উপজেলার ভাড়ইমারী গ্রামের ৪০ জন কৃষক দলগত ঋণ হিসেবে ১৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে কেউ ২৫ হাজার, কেউ ৪০ হাজার টাকা করে ঋণ পান।

ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ না করায় ২০২১ সালে ৩৭ জন কৃষকের নামে ব্যাংক মামলা করে। সম্প্রতি আদালত তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে গত ২৫ নভেম্বর ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।

বিষয়টি নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। এ অবস্থায় গত ২৭ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক শামসুজ্জামান গ্রেপ্তার ১২ কৃষকসহ ৩৭ জনের জামিন মঞ্জুর করেন।

এ বিভাগের আরো খবর