চট্টগ্রামে শিশু আয়াতকে হত্যায় কেবল আসামি আবির নয়, একটি চক্র জড়িত বলে দাবি করেছেন আয়াতের বাবা সোহেল রানা।
তার অভিযোগ, আয়াতের মতো তাকেও হত্যার পর ৬ টুকরা করা হবে বলে হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি দেয়া হয়েছে। পুলিশকে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন।
আয়াত হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে এসব অভিযোগ জানান সোহেল।
তিনি বলেন, “একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছি। অচেনা নম্বর থেকে আমাকে টেক্সট দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। ওই নম্বর থেকে এসএমএস দিয়ে সে বলছে, ‘তোর মেয়েকে ছয় টুকরা করেছি, তোকেও করব।’ আমি পুলিশকে জানাইছি। সে ভয়েস বার্তাও দিছে।”
সোহেল আরও বলেন, ‘আমার মেয়েকে এমন নৃশংসভাবে শুধু কি আবির আলীই হত্যা করেছে? এখানে একটা চক্রও থাকতে পারে। তারা মিলেমিশে এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তা তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
‘তা না হলে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাওয়া থেকে সরে যেতে কারা হুমকি দিচ্ছে?’
হোয়াটসঅ্যাপে পাওয়া বার্তা প্রসঙ্গে সোহেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাকে মেসেজ দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আবার ভয়েস মেসেজ পাঠিয়ে বলছে, আবিরকে নাকি সে (হুমকিদাতা) পালিয়ে যেতে বলেছিল। পালিয়ে না যাওয়ায় পুলিশ ধরে ফেলছে। আমার মেয়েকে ছয় টুকরা করছে, আমাকেও নাকি ছয় টুকরা করবে। তাছাড়া মারার আগে আয়াতকে নাকি ধর্ষণ করা হয়েছিল।
‘২৮ তারিখ প্রথম মেসেজ দিয়েছিল। তখন তেমন গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু পরে দেখি আরও মেসেজ পাঠিয়েছে। সকালে ভয়েস মেসেজ দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে। আমরা পুলিশকে জানাইছি।’
আয়াত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে বলেন, ‘আমাকে মঞ্জুর সাহেব (আয়াতের দাদা) ফোন করেছিলেন। আমি আইনি পদক্ষেপ নিতে বলেছি। স্থানীয় থানায় ডায়েরি করারও পরামর্শ দিয়েছি।’
নগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট বিদ্যুৎ অফিস এলাকার বাসা থেকে গত ১৫ নভেম্বর নিখোঁজ হয় আলিনা ইসলাম আয়াত। পরদিন ইপিজেড থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা সোহেল রানা।
এর ৯ দিন পর সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িত সন্দেহে আয়াতের পরিবারের ভাড়াটিয়া আবির আলীকে আটকের কথা জাানায় পিবিআই।
পিবিআইয়ের দাবি, আটকের পর আয়াতকে খুন ও লাশ গুম করার কথা স্বীকার করেছেন আবির। ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য আয়াতকে অপহরণচেষ্টার সময় শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়।
এরপর শনিবার প্রথমবার আবিরকে দুই দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। পরে তাকে নিয়ে আয়াতের খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধারে সাগরপাড়ে অভিযান চালায় পিবিআই। এরপর সোমবার আবিরকে দ্বিতীয় দফায় সাত দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের প্রথম দিন মঙ্গলবার আবিরের মা-বাবার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে আকমল আলী সড়ক এলাকার সাগরপাড় স্লুইস গেটের পাশ থেকে আয়াতের খণ্ডিত দুই পা উদ্ধার করে পিবিআই। পরদিন একই এলাকা থেকে আয়াতের টুকরা মাথা উদ্ধার করা হয়।
আয়াত নিখোঁজের ১৭তম দিন শুক্রবারও মরদেহের বাকি অংশের খোঁজে সাগরপাড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে পিবিআই।