নৌপরিবহন শ্রমিকদের চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। সোমবার শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সরকার ও মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) খালেদ মামুন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শ্রম ভবনে এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের উপস্থিতিতে নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী এ সময় বলেন, ‘আমি এমনটা বলব না যে মালিক বা শ্রমিক পক্ষ ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। তবে ঝামেলা একটা হয়েছে, যেখান থেকে মামলা হয়েছে। আর তারপরই নৌ-ধর্মঘটের শুরু।
‘মামলা থাকবে, সেটা আমি দেখব। মামলা প্রত্যাহার হবে। যারা আসামি হয়ে জেলহাজতে গেছেন তাদের জামিনেরও ব্যবস্থা করব। কিন্তু স্থায়ী একটা বিহিত হওয়া দরকার।’
তিনি জানান, প্রস্তাবনা প্রণয়ন কমিটি হয়েছে। শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তায় অন্তর্বর্তীকালীন টোকেনের ব্যবস্থা করা হবে। কমিটি এক মাসের মধ্যে মজুরি নির্ধারণ করবে। পরে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ‘মালিক ও শ্রমিক পক্ষের পরস্পরের প্রতি দরদ থাকা দরকার। সেখানে ব্যত্যয় ঘটছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ, কিছু মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে। সবাই নিজের কাজটা করলে আজ এই পর্যায়ে আসতে হয় না। আর যে কোনো সমস্যায় মালিকের চেয়ে শ্রমিকের ক্ষতিটাই বেশি। কারণ শ্রমিক তার সমস্যাটা টের পান প্রথম দিন থেকেই। যে কারণে তাদের সমস্যার সমাধান আগে দরকার।’
‘আপাতত অন্তর্বর্তীকালীন বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যেসব নৌযানের ধারণ ক্ষমতা ১০০০-১৫০০ টন ওজনের সেসব যানের ভাতা হবে ১৫০০ টাকা; আর এক হাজারের নিচে নৌযানের শ্রমিকরা পাবেন ১২০০ টাকা ভাতা।’
প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে নৌপরিবহন শ্রমিকদের ডাকা চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘আমরা ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে শ্রমিকদের ভাতা বা মজুরি। এ ব্যাপারে প্রতিমন্ত্রী যাদের দায়িত্ব দিয়েছেন তারা ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করলে সমস্যা এক মাসের মধ্যেই সমাধান সম্ভব। আশা করছি আমাদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সদয় হবেন। ভাতা এই নভেম্বর মাস থেকেই কার্যকর হবে।’
নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আতিকুল ইসলাম টিটু বলেন, ‘নৌ অধিদপ্তরের ডিজির আশ্বাস পেয়ে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছি। বলা হয়েছে, আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয়া হবে। আমাদের প্রধান দাবি ছিল মজুরি নির্ধারণ। সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে মন্ত্রণালয় বিষয়টি জেনেছে। এখানে নৌপরিবহনের যে বিষয়গুলো ছিল সেগুলো করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আগেও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ডিজির কথা হয়েছে। তিনি ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের বিষয়টিও বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের এখতিয়ারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ভারত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। সামনে ভারতে মিটিং আছে। ওই মিটিংয়ের পর কথা হবে।
‘আজ আমাদের সঙ্গে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যতদিন পর্যন্ত ভাতা নির্ধারণ না হয় ততদিন এক হাজার টনের নিচের জাহাজগুলোর সব শ্রমিক ১২০০ টাকা করে অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা পাবেন। আর এক হাজার টনের উপরের জাহাজের শ্রমিকরা পাবেন ১৫০০ টাকা করে।’
কাজে যোগদানের সময় সম্পর্কে জানতে চাইলে এই নৌযান শ্রমিক নেতা বলেন, ‘আমরা আজ (সোমবার) সন্ধ্যা থেকেই কাজে নেমে পড়ব।’
সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিআইডব্লিউটিএ, শিপিং করপোরেশন, নৌযান মালিক ও শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।