চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা ও অর্থায়নে চীন শুরুতে রাজি ছিল না বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
শনিবার টানেলের দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজের সমাপনী উদযাপন অনুষ্ঠানে সেই স্মৃতিচারণা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০১৪ সালে আমার মনে আছে, সোমবার দিন আমরা যখন প্রথম এই টানেলের পরিকল্পনা করি, তখন চীনের একটা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আমাদের কথা হয়, তবে তখন তারা এই টানেল করতে আগ্রহী ছিল না। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কনভেনশনাল ডিপ্লোম্যাসির বাইরে গিয়ে যেটা করেছেন, সেটার বাস্তব প্রতিফলন হচ্ছে এই টানেল।’
তিনি বলেন, ‘চায়না আমাদের প্রথমে কথা দিল যে, তারা টানেল করে দেয়ার জন্য সব রকম ঋণ ও সহায়তা দেবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের জুলাই মাসের ফার্স্ট উইকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চায়না সফরে যান। তখন ব্রিজ ডিভিশন থেকে আমাদের ইনডাক্ট করা হলো।
‘আমরা যখন চায়নাতে গেলাম, সব চুক্তিপত্র নিয়ে যেদিন মিটিং হবে সন্ধ্যায়, তার আগের দিন রাতে আমাদের জানানো হলো, চায়নিজ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এই প্রজেক্টে তারা সহায়তা দিতে প্রস্তুত নন। এরপর আমরা রাত ১টা-২টা পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অনেক নেগোসিয়েশন করার পর উনারা রাজি হলো না।’
সে সময়ের ঘটনার ধারাবাহিকতা বর্ণনা করে সচিব বলেন, “পরের দিন যখন ২টার সময় মিটিং শুরু হলো, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলার পর চায়নিজ সরকার বিনীতভাবে অসম্মতি প্রকাশ করল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার বলার পরও তারা সম্মত হয়নি। এই জন্য আমরা একটু মনঃকষ্টে ছিলাম।
“পরবর্তী সময়ে ডিনারের সময় প্রধানমন্ত্রী একটা আনকনভেনশনাল ডিপ্লোম্যাটিক আলোচনা তুলে এই টানেলের বিষয়ে কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চায়নিজ সরকার আমাদের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছে। যদি এভাবে ফিরিয়ে দেয়, তাহলে ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলে বা মানুষের মধ্যে কী ধরনের মনোভাব তৈরি হতে পারে সেটির উল্লেখ করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, ‘আপনারাই আমাদের ইনভাইট করেছেন, আমরা এটা (টানেল) চাইনি'।”
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘তখন চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টার আমাদের ডাকলেন আর সবাইকে ইনস্ট্রাকশন দিলেন। ডাইনিং টেবিলেই চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টার ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চায়নিজ কমার্স মিনিস্টার, ফাইন্যান্স মিনিস্টার এবং আমরা যখন আলোচনা শুরু করলাম, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টার কনভিন্স হলেন। ভোর ৪টায় একটা লেট নাইট ডিনার ডাকা হলো এবং সেখানে চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো।’
সচিব বলেন, “তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চায়নিজ প্রাইম মিনিস্টারকে বললেন, ‘আপনার আসার দরকার নেই। আমার বড় স্যুইটে বড় ড্রইংরুম আছে। সেখানে বসে আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করে ফেলব।’ রাত ১২টায় প্রধানমন্ত্রীর রুমে বসে চায়নিজ কমার্স মিনিস্টার ও আমরা চুক্তিটা স্বাক্ষর করেছি। আর এখানে আনকনভেনশনাল ডিপ্লোম্যাটিক এফোর্ট না থাকলে এটা কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল না।”
তিনি বলেন, “রাত ১২টায় আমরা যখন চুক্তি স্বাক্ষর করে বের হয়ে যাই, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বললেন, ‘তোমরা কোথায় যাচ্ছ? আমি বললাম, ‘স্যার (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের তো চুক্তি শেষ। আমরা রুমে চলে যাচ্ছি।’ তখন তিনি বললেন, ‘তোমরা কোথাও যাবে না। টেবিলে ভাত, সবজি, ডাল, গরুর মাংস আছে; খেয়ে যাও'।”
চীনে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সাফল্যে আমরা গর্বিত। চীন বাংলাদেশের সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চায় এবং আছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। এটা এখন চোখ খুললেই দেখা যায়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং আমাকে সকালে ফোন করে এই প্রকল্পের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন ও বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।’
তিনি পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘এর আগে জুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেছেন। সেই কাজের সঙ্গেও চীন যুক্ত ছিল। চীনের একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানি পদ্মা সেতুর কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল; এখানেও আছে।’
বাংলাদেশ এখন বিশ্বকে উন্নয়নের মাধ্যমে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের একটা মডেল হিসেবে গড়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। চীন সব সময় বাংলাদেশের পাশে আছে ও থাকবে।’