তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি না দেয়ার ইঙ্গিত দিলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, তারা অনুমতি দেবেন। তবে বিএনপির পছন্দের জায়গা নয়াপল্টন নয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের জমায়েত হতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুমতি দিতে বলেছেন।
এদিন সদরঘাটে বিলাসবহুল লঞ্চ সুন্দরবন-১৬ উদ্বোধন করতে যান মন্ত্রী। তখন তার কাছে বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রাখেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘শর্ত সাপেক্ষে ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে দেয়া হবে।’
‘আমরা মনে করি বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, সেজন্য রাজনীতি করার অধিকার তাদের আছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারা গঠনমূলক রাজনীতি করবে, এখানে আমাদের বাধা দেয়ার কিছু নাই। আমরা মনে করি তারা যদি রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার ভঙ্গ করে অন্য কিছু করার চেষ্টা করে, তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।
‘তাদেরকে আমরা কখনও মানা করিনি, তারা সারা বাংলাদেশে সভা করছে মিটিং করছে। ঢাকার মিটিংয়ের জন্যও আমরা তাদের মানা করিনি আমরা শুধু আমাদের আশঙ্কার কথা তাদের জানিয়েছি যে আপনারা ৩০ লাখ লোক নিয়ে আসবেন কোথায় থাকবে তারা? সারা ঢাকা শহর অচল করে দিবেন সেদিন আপনাদের কথায় সেটাই বুঝা যাচ্ছে।
‘আমরা তাদের বলেছি বড় কোনো জায়গায় যেতে। তাদের লেটেস্ট দাবি ছিল তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা করতে চায়। প্রধানমন্ত্রীও আমাদের বলেছেন যে তারা যেখানেই পারমিশন চেয়েছে সেখানেই যেন দিয়ে দেই।
‘আমিও ডিএমপি কমিশনারকে বলে দিয়েছি বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা করার পারমিশন দিয়ে দিতে। তাদের সভা করার অনুমতির কথা জানিয়ে দেয়া হবে। তবে বিএনপিকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে তারা কোন ভায়োলেন্স করবেন না, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করবে না।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রতি শনিবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করে আসা বিএনপি ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকায় জমায়েত করতে চায়। সেদিন দলটি জড়ো হতে চায় নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদনও করেছে তারা।
তবে বিএনপি যে সেখানে অনুমতি পাচ্ছে না, সেটি গত কয়েক দিনে সরকারের বক্তব্যেই উঠে আসে। বিএনপি ১০ লাখ মানুষের জমায়েতের আগাম ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১০ লাখ মানুষ জমায়েতের মতো জায়গা নেই নয়াপল্টনে। তাই তাদের অন্য জায়গায় সমাবেশ করা উচিত।
এরপর তথ্যমন্ত্রী বিএনপিকে পূর্বাচলে সমাবেশ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এত মানুষের জমায়েতের মতো আর কোনো জায়গা নেই ঢাকায়।
গত ৮ অক্টোবর থেকে প্রতি শনিবার বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করছে বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল দলটি
তবে বুধবার এক আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘ঝামেলা না করে’ নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দিতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান।
এই সমাবেশ নিয়ে রাজনীতিতে বাড়তি উত্তাপ দেখা দেয় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানের বক্তব্য। তিনি গত মাসে ঘোষণা দেন, ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ চলবে তাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের কথায়। যদিও পরে মির্জা ফখরুল জানান, ১০ ডিসেম্বর কোনো চূড়ান্ত কর্মসূচি নয়। তারা এমন কিছু ঘোষণা দেবেন না, যা জনজীবনকে ব্যাহত করে, তারপরেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপিকে ‘হেফাজতের মতো দমন’, সেদিন ‘ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাহারা’ বসানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
এদিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় সমাবেশ করলে গন্ডগোল করতে সুবিধা হয়। এই দুই উদ্দেশ্যে তারা সেখানে করতে চায়। সরকার তো গন্ডগোল করার অনুমতি কাউকে দিতে পারে না।’
বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে রাজি কি না, জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে চাননি। নিউজবাংলার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হলে জানাব। মিটিং হলে আপনারা জানতে পারবেন।’