আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপি যে ধরনের সমাবেশ করতে চাইছে, তার জন্য পূর্বাচল ছাড়া জায়গা নেই বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা যত মানুষ আনবেন বলছেন, সেটির জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও যথেষ্ট নয়।
বিএনপি বিশৃঙ্খলা করতেই বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চাইছে বলে মনে করেন মন্ত্রী। বলেন, বিরোধী দলটি সেদিন অগ্নিসন্ত্রাস করতে চায়, মানুষের সম্পদের ওপর হামলা করতে চায়। এভাবে তারা বিশেষ একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।
ঝামেলা না করে নয়াপল্টন দ্রুত বরাদ্দ দিতে পুলিশের প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আহ্বানের মধ্যে বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
হাছান বলেন, ‘তারা কেন নয়াপল্টনের সামনে সমাবেশ করতে চায়, সেটি সহজেই অনুমান করা যায়। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। হেফাজতে ইসলাম যে ধরনের বিশৃঙ্খা সৃষ্টি করেছে, তারাও সেটা করতে চায়। তারা প্রয়োজনে গাড়িঘোড়া ভাঙচুর, অগ্নিসন্ত্রাস করতে চায়। মানুষের সম্পদের ওপর হামলা পরিচালনা করতে চায়। এভাবে তারা বিশেষ একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়।’
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে ধারাবাহিক সমাবেশের অংশ হিসেবে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে কর্মসূচির ঘোষণা এসেছে। দলটি নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হওয়ার অনুমতি চেয়ে পুলিশের কাছে আবেদন করেছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না এলেও সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা এ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন। বিএনপি সমাবেশে ১০ লাখ লোক জমায়েত করতে চায়- দলটির নেতাদের এমন বক্তব্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১০ লাখ মানুষ জমায়েতের মতো জায়গা নেই নয়াপল্টনে। তাই তাদের অন্য জায়গায় সমাবেশ করা উচিত।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে ঢাকার বাইরের এই এলাকা ছাড়াও গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান বা মিরপুরের কালসী বেছে নেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে বিএনপি নয়াপল্টনই চায়।
গত জুলাই থেকে বিএনপি দেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাড়ানোর পর নয়াপল্টনে একের পর এক সমাবেশ করেছে। এসব সমাবেশে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেকটাই বেশি ছিল। পুলিশের সতর্ক উপস্থিতি থাকলেও কোনো কর্মসূচিতেই বিশৃঙ্খলা হয়নি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় মির্জা ফখরুল পুলিশকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তারা সমাবেশের স্থান দেয়নি এখনও। পল্টনে সমাবেশ করার কথা বলা হয়েছে। ডিএমপির প্রতি আহ্বান, কোনো ঝামেলা না করে স্থানের অনুমতি দিন।’
‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী কারণে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চান?
তবে হাছান মাহমুদ আবারও বিএনপিকে পূর্বাচলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তারা অন্য জায়গায় যেসব সমাবেশ করেছে, সেগুলো তো মাঠেই হয়েছে। তারা যেভাবে সমাবেশ করতে চাচ্ছে, বিপুলসংখ্যক মানুষ হবে, সে রকম মাঠ তো ঢাকা শহরের মধ্যে নেই।
‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও তত বড় না। কাজেই সে রকম সমাবেশ করতে হলে পূর্বাচল ছাড়া আর কোনো জায়গা আমি দেখছি না। কারণ ১০ কিংবা ২০ লাখ মানুষের জন্য পূর্বাচল ছাড়া তো আর কোনো জায়গা আমরা দেখছি না।’
‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কী কারণে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চান?- এমন প্রশ্ন রেখে তথ্য মন্ত্রী বলেন, ‘তারা বিশাল সমাবেশ করবেন, কেউ বলছেন ১০ লাখ, আবার কালকে এক টেলিভিশনে দেখলাম ২৫ লাখ। কিন্তু নয়াপল্টনের সামনে ৫০ হাজার মানুষ ধরে আরকি। এক কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা যদি বন্ধ করা যায়, তাহলে ৫০ হাজার মানুষ ধরে। তাই নয়াপল্টনে তাদের সমাবেশ করার উদ্দেশ্যের মধ্যে বোঝা যায় তাদের সমাবেশ আগে থেকেই ফ্লপ।’
‘আর সমাবেশ আর কেন একটি প্রধান রাস্তা বন্ধ করে করতে হবে। আমরা কি কোনো প্রধান রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করি?’- প্রশ্ন রাখেন হাছান।
‘১০ তারিখ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারা’
রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাজধানীতে পাহারা দেবে বলেও জানান হাছান।
বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর আমাদের কর্মীরা, আমাদের নেতারা ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে সতর্ক পাহারায় থাকবে।’
বিএনপি নেতারা ১০ ডিসেম্বর নিয়ে বাগাড়ম্বর করছে বলে মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলায় একটা কথা আছে খালি কলসি বাজে বেশি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে খালি কলসির মতোই। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে যেভাবে বাগাড়ম্বর তারা করছেন, এতে মনে হচ্ছে তাদের খালি কলসি বেশি বাজছে।
‘তারা তো একদফার আন্দোলনে আছেন। সরকারের পদত্যাগ দাবি করে আসছেন গেল ১২/১৩ বছর ধরে। ১০ ডিসেম্বর কতটুকু কী হবে, সেটা আমরা জানি ও বুঝি। কারণ, তারা তো সারাদেশে সমাবেশ করেছেন। সমাবেশের নামে কোনো কোনো জায়গায় পিকনিক করেছেন। কোনো কোনো জায়গায় তারা সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা করেছেন।’
বিএনপির বিভাগীয় শহরের তুলনায় জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কোনো একটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনেই এর চেয়ে বেশি মানুষ হয় বলেও দাবি করেন হাছান।
বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে বরিশাল থেকে লঞ্চে করে তাদের লোকজন চট্টগ্রামে গিয়েছে। সিলেটের সমাবেশে গেছে কুমিল্লা থেকে, ঢাকা থেকেও গেছে। এখানেও কী হবে-আমরা জানি, বুঝি। তবে তারা যাতে সমাবেশ করতে পারে সেজন্য সরকার সর্বাত্মক সহায়তা করে এসেছে। আর সে জন্যই তারা নির্বিঘ্নে সমাবেশ করতে পেরেছে।’
‘আমরা সমাবেশ করতে গেলে হতো গ্রেনেড হামলা’
বিএনপি শাসনামলে আওয়ামী লীগ নির্বিঘ্নে সমাবেশ করতে পারেনি বলেও জানান হাছান।
তিনি বলেন, ‘তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা আমাদের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে, বোমা হামলা চালিয়েছে, বহু মানুষকে হতাহত করেছে।
‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আমি নিজেও আহত হয়েছি। তাদের সমাবেশে আজ পর্যন্ত একটি পটকাও ফুটেনি। সরকার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে বিধায় এভাবে নির্বিঘ্নে তাদের পক্ষে সমাবেশ করা সম্ভব হয়েছে।’