নেট দিয়ে ঘের দেয়া একখণ্ড জমি। জমির কিছু অংশে পেঁয়াজ, রসুন, ও কিছু শীতকালীন শাকসবজির চাষ করেছেন নাজমা বেগম নামের এক গ্রামীণ নারী। সেই জমিতে শাকসবজির উৎপাদন বাড়াতে প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করেন তিনি।
সোমবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামে গিয়ে কথা হয় ৪০ বছর বয়সী নাজমা বেগমের সঙ্গে। তিনি জানান, বাড়ির পাশে জমিতে একটি লিচুর বাগান ছিল তার। কিন্তু বাগানে গত পাঁচ বছর ধরে ফলন আসছে না। তাই বাগান কেটে এবারই প্রথম শাকসবজি চাষ শুরু করেছেন।
নাজমা বেগম বলেন, ‘বলাবলি হচ্ছে সামনের বছর নাকি খাদ্যসংকট দেখা দিবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিত্যক্ত জায়গা ফেলে না রেখে শাকসবজি চাষাবাদ করতে বলেছেন। আমিও চিন্তা করে দেখলাম বাসার পুরুষরা চাকরি ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। আমি নিজেই এর পরিচর্যা করতে পারব। এতে ব্যবসা না হোক, নিজের পরিবারের শাকসবজির চাহিদা মিটবে আমার।’
গ্রামের রাস্তা দিয়ে একটু সামনে এগোতেই দেখা গেল বাড়ির উঠানের পাশে পরিত্যক্ত আরেক খণ্ড জমিতে একই রকম নেটের ঘের। ভেতরে কাজ করছেন নাসিমা আক্তার নামের এক বিধবা নারী।
তিনি জানান, এটা তার স্বামীর ভিটা। স্বামী মারা গেছেন প্রায় এক যুগ। তিন বছর আগে গ্রামের আরেক জায়গায় নতুন বাড়ি করেছেন তারা। সন্তান নিয়ে সেখানেই আছেন। জায়গাটা পড়ে ছিল। বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট দেখা দেবে এমন কথা শোনার পর পুরোনো ভিটেতে প্রথমবারের মতো শাক ও সবজির কিছু চারা রোপণ করেছেন। সঙ্গে রসুন বুনেছেন। এ ছাড়া মরিচসহ আরও কিছু সবজির চারা রোপণ করার পরিকল্পনা আছে তাদের।
নাসিমা বেগম বলেন, ‘বাজারে শাকসবজির অনেক দাম বেড়েছে। আয়ের অংশ থেকে কোনো সঞ্চয় হয় না। সংসারের চাপ সামলাতে ও পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমরা অনায়াসে শাকসবজি চাষ করতে পারি। এই একখণ্ড জমি থেকেই সারা বছর শাকসবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব।’
গ্রামের শিক্ষার্থী এমদাদুল হক বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে সংকটের কথা বলাবলি হচ্ছে। এ কথাগুলো সত্যি আতঙ্কের। তবে যাদের আশপাশে পরিত্যক্ত জমি আছে, সেগুলো ফেলে না রেখে আমরা যদি একটা দুটো সবজির গাছ রোপণ করি, তবে না খেয়ে মরব না। একে অপরের সঙ্গে সবজি বিনিময় করে হলেও চলব। আমাদের উৎপাদন করতে হবে। অনেকের জমি নেই, তাদের যেন সহযোগিতা করতে পারি এমন প্রস্তুতি নিতে হবে। যেকোনো দুর্যোগ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোহম্মদ আজিজ বলেন, ‘বাড়ির উঠানের পাশে জমি, পুকুরপাড় ইত্যাদি জায়গাগুলোতে আমরা মসলাজাতীয় ফসল, শাকসবজি ও ফলের গাছ রোপণের পরামর্শ দিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলছি, যেন তারা এক ইঞ্চি জমিও ফেলে না রাখে।’