প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসতে রাজি হয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান। আগামী বছর তিনি এই সফরে আসবেন।
গণভবনে শনিবার সকালে সৌজন্য সাক্ষাতে এসে প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসেফ এসা আল দুহাইলান।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপ প্রেস-সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ ২০২৩ সালের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন। তার এই সফরটি বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
সাক্ষাৎকালে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স যে প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তার একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন সৌদি দূত। ৩০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৮৫ সালে সৌদি যুবরাজ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজের ঢাকা সফরের পর এটিই কোনো সৌদি যুবরাজের প্রথম বাংলাদেশ সফর। সুতরাং এই সফর দুই দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সফরের তারিখ ও সময়সূচি কূটনৈতিক চ্যানেলে পরবর্তীতে নির্ধারণ করা হবে।
রাষ্ট্রদূত আশা করেন, সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সফরের সময় বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। যেগুলো দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি যুবরাজের সফর বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার পাশাপাশি সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করবে।
জবাবে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে সৌদি আরবের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে আরও উচ্চ থেকে উচ্চতর হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশে তেল শোধনাগার স্থাপন, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হালাল খাদ্য শিল্পে বিনিয়োগসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে আরও সৌদি বিনিয়োগ আহ্বান করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সৌদি উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিশেষ করে মিরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ দিতে প্রস্তুত সরকার।
বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের প্রশংসা করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয় অবহিত করবেন। বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের কিছু উদ্যোগ চলছে বলেও জানান তিনি।
সৌদি ফাস্ট-ফুড সার্ভিস ‘হারফি’সহ কয়েকটি সৌদি ব্র্যান্ড বাংলাদেশে ভালো ব্যবসা করছে বলেও প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের মেগা প্রজেক্টে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। গত মাসে সৌদি যুবরাজ পাঁচটি দেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি তহবিল বরাদ্দ করেছেন। এই ধরনের তহবিল পেয়ে বাংলাদেশও লাভবান হতে পারে। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে বিশাল ক্ষেত্র এখনও অনাবিষ্কৃত বলেও মন্তব্য তার।
মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর আগ্রহের জন্য সৌদি আরবের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর কল্যাণে বাংলাদেশ সৌদি আরবসহ সব মুসলিম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থানে বাংলাদেশ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। এটি বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা।
১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন সৌদি দূত। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সৌদি আরব বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
বাংলাদেশি ও সৌদি বিনিয়োগকারীদের যৌথ উদ্যোগে সৌদি আরবে সার কারখানা নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে সৌদি দূত বলেন, প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করে আমাদের কাজ করা দরকার।
দেরিতে অর্থ পরিশোধের শর্তে বাংলাদেশের কাছে তেল বিক্রির প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়নে দেশের জ্বালানি তেল প্রয়োজন। এজন্য সৌদি সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি দূতের মাধ্যমে দুই পবিত্র মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক এবং সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদকে শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।