বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফারদিন অটোরিকশায় যান চনপাড়ায়, গুম প্রাইভেট কারে

  •    
  • ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ১২:৪৩

নিউজবাংলার হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ৪ নভেম্বর রাত ২টা ৩ মিনিটে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে একটি লেগুনায় চড়েন ফারদিন। এর ১০ মিনিট পর চার যুবকের সঙ্গে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা মহাসড়কের স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে নামেন। এর মিনিটখানেকের মধ্যে ফারদিন ওই চার ব্যক্তির সঙ্গে একটি অটোরিকশায় চড়ে চনপাড়ার দিকে যান।

বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে একটি অটোরিকশায় পৌঁছান রূপগঞ্জের আলোচিত চনপাড়া বস্তিতে।

চনপাড়া বস্তিমুখী অটোরিকশায় ফারদিনের ওঠার দৃশ্য ধরা পড়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। সেই ফুটেজ পেয়েছে নিউজবাংলা। সিসিটিভি ফুটেজটি দেখানোর পর ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন ছেলেকে শনাক্ত করেছেন।

ফারদিন চনপাড়া যাওয়ার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে মাদক কারবারিদের বেদম পিটুনির শিকার হয়ে প্রাণ হারান। এরপর একটি প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে তার মৃতদেহ নদীতে ফেলে দেয়া হয়।

নিউজবাংলার হাতে আসা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ৪ নভেম্বর রাত ২টা ৩ মিনিটে যাত্রাবাড়ী মোড় থেকে একটি লেগুনায় চড়েন ফারদিন। এর ১০ মিনিট পর চার যুবকের সঙ্গে যাত্রাবাড়ী-ডেমরা মহাসড়কের স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে নামেন। সেখান থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরেই চনপাড়া বস্তি।

বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশ। ছবি: সংগৃহীত

লেগুনা থেকে নামার মিনিটখানেকের মধ্যে ফারদিন ওই চার ব্যক্তির সঙ্গে একটি অটোরিকশায় চড়ে চনপাড়ার দিকে যান।

আরও পড়ুন:সেই রাতে ফারদিনের চনপাড়ায় যাওয়ার ছবি সিসি ক্যামেরায়

যে সিসিটিভি ক্যামেরায় ফারদিনের সিসিটিভি ফুটেজে স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে নামা এবং চনপাড়ামুখী অটোরিকশায় চড়ার দৃশ্য ধরা পড়েছে, সেটির সময় রিয়েল টাইমের চেয়ে ১০ মিনিট পিছিয়ে রাখা ছিল। ফলে সিসিটিভিতে ফারদিনকে রাত ২টা ৩ মিনিটে লেগুনা থেকে নামতে দেখা গেলেও প্রকৃত সময় তখন ছিল রাত ২টা ১৩ মিনিট।

এর আগে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে চনপাড়া এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে যেসব মাদক কারবারি শনাক্ত হন, তাদের সঙ্গেই ফারদিন লেগুনা থেকে নেমে অটোরিকশায় চড়েছিলেন।

সিসিটিভি ফুটেজে স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে ফারদিনের নামা এবং চনপাড়ামুখী অটোরিকশায় চড়ার দৃশ্য।

চনপাড়ার পরবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ২টা ২৩ মিনিটে ওই চার ব্যক্তি অটোরিকশা থেকে নেমে হেঁটে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে প্রবেশ করছেন। বস্তির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ফারদিন বস্তি এলাকায় ঢোকেন অটোরিকশায় চড়ে। পরে তাকে র‌্যাবের সোর্স সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে রায়হান বাহিনী।

আরও পড়ুন: ফারদিন হত্যার পর মরদেহ সরানো হয় প্রাইভেট কারে

সিসিটিভি ফুটেজে চার যুবকের ঢোকার আগে-পরে বেশ কয়েকটি অটোরিকশাকে ওই পথে দেখা গেছে।

কাঁচপুর ব্রিজের আশপাশের নদীতে ফেলা হয় মৃতদেহ

চনপাড়া বস্তির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র নিউজবাংলাকে জানায়, সে রাতে ফারদিনের সঙ্গে থাকা চার যুবকের আরেকটি উদ্দেশ্যও ছিল। সেটি হলো মাদক গ্রহণের পর চলে যাওয়ার সময় ফারদিনের কাছ থেকে বাকি টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া। এ কারণেই তারা বস্তিতে ঢোকার আগে অটোরিকশা থেকে নেমে যান।

তবে এর আগেই স্থানীয় মাদক কারবারি রায়হান আহমেদের অনুসারীরা র‌্যাবের সোর্স মনে করে পিটিয়ে ফারদিনকে হত্যা করে। হত্যার পর রায়হানের বন্ধু ও বোনজামাই ফাহাদ আহমেদ শাওনের প্রাইভেট কারে করে ফারদিনের মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে সরানো হয়।

আরও পড়ুন: মাথায় ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে ফারদিনের মৃত্যু

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার তথ্য অনুযায়ী, ফারদিন হত্যার খবর পেয়ে শাওন তার বাসার সামনে থেকে প্রাইভেট কারটি নিয়ে রাত ২টা ৫২ মিনিটে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। সিসিটিভি ফুটেজেও এ দৃশ্য ধরা পড়েছে।

এরপর রাত ৩টা ৩ মিনিটে গলি থেকে বেরিয়ে বালুব্রিজ হয়ে মূল সড়ক ধরে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের দিকে চলে যায় শাওনের সাদা রঙের এক্সিও প্রাইভেট কারটি। এরপর সেখান থেকে বামে মোড় নিয়ে সুলতানা কামাল সেতুর দিকে চলে যায় গাড়িটি। এটির গতিবিধি ধরা পড়েছে- সিসিটিভির এমন ফুটেজও পেয়েছে নিউজবাংলা।

গলি থেকে বেরিয়ে বালুব্রিজ হয়ে মূল সড়ক ধরে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারের দিকে চলে যায় শাওনের সাদা রঙের এক্সিও প্রাইভেট কারটি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ধারণা, এরপর সেতুতে ওঠার আগে ডানে মোড় নিয়ে সাইনবোর্ডে যাওয়ার রাস্তা বেছে নেয় গাড়িটি। পরে সাইনবোর্ড এলাকার আগে বামে মোড় নিয়ে নদীতীরের নির্জন রাস্তা ধরে কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় গিয়ে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়া হয় ফারদিনের মরদেহ।

সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বাবা নির্বাক

যাত্রাবাড়ী-ডেমরা মহাসড়কের স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ের সিসিটিভি ফুটেজে ফারদিনের উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘আমি ৯০ পারসেন্ট নিশ্চিত যে, দুটি ফুটেজেই আমার ছেলে ফারদিন রয়েছে। ওর কালো প্যান্ট আর জুতাটা বোঝা যাচ্ছে। তাছাড়া আমার ছেলের দেহের গড়নেই তো তাকে চোখের পলকে ধরা যায়।’

আবেগতাড়িত বাবা বলেন, ‘আমি শুধু চাই আমার ছেলে হত্যাকরীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এখন আর কোনো চাওয়া নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে কখনও সিগারেটের ধোঁয়া পর্যন্ত সহ্য করতে পারে না। এই ছেলে হঠাৎ কেন মাদকের স্পটের দিকে যাবে- এটা আমার কোনোভাবেই মাথায় আসছে না। আমার ছেলে নিশ্চয়ই কোনো কিছু নিয়ে ডিপ্রেশনে ছিল, নইলে এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত কেন নেবে!’

এ বিভাগের আরো খবর