জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে এবারের প্রস্তাবটি ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে উত্থাপন করে।
জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানায়।
প্রস্তাবটিতে প্রাথমিকভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর, যা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আরও অবনতির শিকার হয়েছে।
এতে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করা, রাখাইন রাজ্যে স্বতঃপ্রণোদিত, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতসহ জাতিসংঘের সব মানবাধিকার কার্যক্রমকে পূর্ণ সহযোগিতা দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রস্তাবটিতে দেশ ও আঞ্চলিক সংস্থাগুলোর (যেমন: আসিয়ান) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে সর্বসম্মতিক্রমে আসিয়ানের পাঁচ দফা সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া চলমান বিচার ও দায়বদ্ধতা নিরূপণ প্রক্রিয়ার ওপর প্রস্তাবটিতে সজাগ দৃষ্টি বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলার অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউশনের তদন্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও বাংলাদেশের নেয়া মানবিক প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
এতে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইসিসি, ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার (আইআইএমএম) ও অন্যান্য দায়বদ্ধতা নিরূপণকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশ যেভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে, তা প্রশংসিত হয়েছে।
‘রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড বার্ডেন শেয়ারিং’ নীতির আওতায় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো যেন বাংলাদেশে মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত রাখে, সে আহ্বানও জানানো হয়েছে এবারের প্রস্তাবে।
এটি গৃহীত হওয়ার সময় বাংলাদেশের চার্জ দি অ্যাফেয়ার্স মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি পাওয়ার দাবি রাখে। এ মানবিক সাড়াদান প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থায়ন।’
গুরুত্বপূর্ণ এ মানবাধিকার ইস্যুতে নেতৃত্ব দেয়ায় ওআইসি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদি উপস্থিতির অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা মানবিক বিবেচনায় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলাম। ব্যস্তচ্যুত এ জনগোষ্ঠীর সব সময়ই মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
‘সে লক্ষ্যে আমরা দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উভয় ফ্রন্টে বহুমুখী কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি, যাতে মিয়ানমারে নিরাপদ ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবর্তন উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়।’
জাতিসংঘের প্রস্তাবটিকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি বিভিন্ন অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতি প্রকাশের একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রস্তাবটি গ্রহণে সহযোগিতা করেছে ১০৯টি দেশ।