সরকার ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করেছে অভিযোগ করে একে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইটের সঙ্গে তুলনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী এবং ঢাকার সমাবেশকে ব্যর্থ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে অপারেশন সার্চ লাইটের মতো সহিংস আক্রমণ করছে বিএনপির নেতা-নেত্রী ও সাধারণ জনগণের ওপর।’
বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি সভার অংশ হিসেবে মঙ্গলবার নরসিংদীতে বিএনপি কার্যালয় পুলিশ অবরুদ্ধ করে রাখে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে অবরুদ্ধ নেতাদের হয়রানি ও নাজেহাল করে। তারপর ‘তাদের চিরচেনা চক্রান্তের অংশ হিসেবে’ সাজানো কাহিনী তৈরি করে।
বিএনপি নেতার লাইসেন্স করা অস্ত্রকে পুলিশ অবৈধ অস্ত্র হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। জানান, জেলা বিএনপির সদস্য সাইফুল ইসলাম সোহেল, আব্দুল বাতেন, জামাল মিয়া, মনিরুল ইসলাম মনির, জেলা কৃষকদল নেতা কামাল উদ্দিন কমল, ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আগামী শনিবার সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। বলেন, হামলার শিকার হলেও পুলিশ ওসমানী নগর উপজেলা ছাত্রদলের ফয়সাল আহমেদ, নুরুল ইসলাম ও শাহেদ আহমেদকে গ্রেপ্তার করেছে।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘গণদাবির ভিত্তিতে বিএনপির গণসমাবেশের কর্মসূচি অপ্রত্যাশিতভাবে সফল হওয়ায় আওয়ামী সরকারের গা জ্বালা করছে। কিন্তু সব বাধা-বিপত্তিকে অতিক্রম করে সমাবেশস্থলের দিকে জনগণের এগিয়ে আসাকে সরকার কোনোমতেই সহ্য করতে পারছে না।
‘অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে মানুষকে এক ঘোর অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী নিজেকে টিকিয়ে রাখার কোনো উপায় না পেয়ে বিএনপিকে দমন করতে নির্বিচারে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করছে।’
রিজভী বলেন, ‘আকাশচুম্বি রিজার্ভের পরিমাণ, বিদ্যুতের বন্যা বইয়ে দেয়া, জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি নিয়ে সরকারের ফাঁকিঝুকি, গরমিল দিয়ে ভুয়া পরিসংখ্যান তৈরি করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা হয়ে আসছে। কিন্তু দেশের মানুষ সেগুলি কখনোই বিশ্বাস করেনি। এখন আন্তর্জাতিক চোখেও উন্মোচিত হয়েছে-এরা কত ধাপ্পাবাজ।
‘কিন্তু মানুষ নিজেদের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছে কী ভয়াবহ দুঃসহ পরিস্থিতি তারা অতিক্রম করছেন! দেশের অধিকাংশ মানুষের এখন নুন আনতে পানতা ফুরায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় দেড় দশক ধরে বর্তমান রক্তপায়ী ফ্যাসিস্ট সরকার বেপরোয়া লুটপাট, সীমাহীন দুর্নীতি ও অসহনীয় দুঃশাসনের যাঁতাকলে পিস্ট হচ্ছে সারাজাতি। দেশ এখন গভীর সংকটে নিপতিত। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস এবং অজস্র রক্তধারার বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রের কবর রচনা করে শুধু পুলিশী শক্তির ওপর ভর করে টিকে থাকা সরকার গোটা জাতিকেই পরাধীন করেছে।
‘গুম-খুন-নারী নির্যাতন-অপহরণের দানবীয় নীতি প্রয়োগ করে এক কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করা হয়েছে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতের ওপর। মূলত সারাজাতি আওয়ামী কুশাসনের ঘেরাটোপে বন্দি।’