রংপুর অঞ্চলে সংরক্ষিত ১০ হাজার ৭৫৯ টি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএমের) মধ্যে ৭ হাজারের বেশি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করায় নষ্ট হয়ে গেছে ৬ হাজার ৩৫ টি। বাকি ১ হাজার ১২৩টির যন্ত্রাংশ হারানো গেছে।
ডিসেম্বরের শেষে রংপুর সিটি নির্বাচনে ভোটের আগে আগে এই প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনের জন্য ধাক্কা হয়ে এসেছে এ কারণে যে, সেখানে কমিশন ভোট নিতে চায় এই যন্ত্র ব্যবহার করেই।
মেশিনগুলোতে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ উঠে এসেছে। প্রথমত উইপোকার আক্রমণ, দ্বিতীয়ত ইভিএম আনা নেয়া সরকার সময় যথেষ্ট সতর্ক না থাকা। কমিশন মনে করছে, পরিবহনের সময় আনসার সদস্যরা বস্তাবন্দি এসব যন্ত্রকে ছুড়ে মারেন, সে জন্যও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো।
তবে যে ক্ষতি হয়েছে সেগুলো মেরামতযোগ্য এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি-বিএমটিএফের সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তিও আছে। তারা মেরামত করে দিলে এগুলো আবার ব্যবহার উপযোগী হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশনের ইভিএম মেশিন সংক্রান্ত চলমান কোয়ালিটি কন্ট্রোল (কিউসি) প্রতিবেদনে ইভিএম নষ্টের এই তথ্য উঠে এসেছে। কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কেবল সিটি নির্বাচন নয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কমিশনের যে পরিকল্পনা সেটিও হোঁচট খাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমনিতেই কমিশনের হাতে যত মেশিন আছে, তা নিয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে না।
দুই লাখ ইভিএম কেনার জন্য যে পৌনে নয় হাজার কোটি টাকার একটি প্রস্তাব সরকারকে দিয়েছে কমিশন। সেটি অনুমোদন না হলে হাতে থাকা ইভিএম দিয়ে পরিকল্পনার অর্ধেক আসনেও ভোট করা কঠিন হয়ে যাবে।
কমিশনের হাতে ইভিএমের সংখ্যা ৯৩ হাজার, যেগুলো দেশের নানা প্রান্তে সংরক্ষিত করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় সেখান থেকে যন্ত্রগুলো পাঠানো হয়। আর সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি- বিএমটিএফে আছে প্রায় ৫৫ হাজার যন্ত্র।
বিদায়ী নূরুল হুদা কমিশন বিএমটিএফ থেকে দেড় লাখ মেশিন কিনেছে। তবে সেগুলো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা তারা করতে পারেনি। এখন মেশিন সংরক্ষণ করতে গিয়ে বেগ পোহাতে হচ্ছে আউয়াল কমিশনকে।
এর আগেও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত এবং চুরি হয়েছে ১২০ টি ইভিএম।
রংপুরে ভোটের আগে সেখানকার পরিস্থিতি যাচাইয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইভিএমগুলোর কিউসি পরীক্ষা হয়। যদিও কমিশনের বক্তব্য হলো, সারা দেশে যাচাইয়ের অংশ হিসেবে এই কাজ করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বেশিরভাগ প্যাকেট উইপোকায় খেয়েছে। প্যাকেটের ভেতর ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট, মনিটরও উইয়ের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এগুলো মেরামত না করলে ব্যবহার করা যাবে না।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওয়্যার হাউজ (গুদাম ঘর) থাকলে যে এটা নষ্ট হতো না, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। ভোটের পর বস্তায় করে যে ইভিএম আনা হয়েছে, তখন হয়তো আনসার সদস্যরা ছুড়ে ফেলেছে। তাহলে তো নষ্ট হবেই।’
উইপোকায় খেয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হয়তো কাগজের প্যাকেটে উইপোকা ঢুকেছে।’
২৭ ডিসেম্বরে রংপুর সিটিতে ভোট আয়োজনে এর প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেখানে কতগুলো ইভিএম ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে এটা বলার সুযোগ নেই।’
ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এসব মেশিন সংস্কার করা হবে বলে জানান অশোক কুমার।
এ বিষয়ে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্প থেকে তো ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই। সেখানে দায়িত্বে যারা আছে তাদের আরও সতর্ক হয়ে সচেতনতার সঙ্গে কাজ করতে বলব।’
প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে। ত্রুটিপূর্ণ মেশিনগুলো তাদের কাছে দিয়ে ভালো মেশিনগুলো সেখানে নেয়ার ব্যবস্থা করব।’