তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তথা বিচার বিভাগ নতুন দিগন্তে প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট অডিটরিয়ামে আয়োজিত ছয়টি কোর্ট প্রযুক্তির উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অনলাইনে নিম্ন আদালতের রায় প্রকাশ, সুপ্রিম কোর্ট মোবাইল অ্যাপস ও আপিল বিভাগের প্রবেশ পাসসহ ছয়টি কোর্ট প্রযুক্তির প্রবর্তন করেছে বিচার বিভাগ, যা মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, একবিংশ শতকের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের ধারায় বিচার বিভাগে আজ (মঙ্গলবার) তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর একগুচ্ছ পরিষেবার সার্থক প্রবর্তন হতে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, যে ছয়টি প্রযুক্তিনির্ভর টুলস এখানে যুক্ত হবে সেগুলো বিচার বিভাগকে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর করার প্রাথমিক পদক্ষেপ মাত্র। উন্মুক্ত হওয়া এই সফটওয়ার, অ্যাপস ও ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোর প্রতিটি স্বতন্ত্র উপযোগিতায় সমৃদ্ধ। যে কাজগুলোর জন্য আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হতো সেগুলো কয়েকটি ক্লিকে নিমিষেই সম্পাদিত হবে।
ছয়টি প্রযুক্তির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রথমটি অধস্তন আদালত থেকে মামলার পরিসংখ্যান পাঠানোর প্রক্রিয়াকে সহজীকরণসহ তথ্য-উপাত্ত দ্রুততার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। এই সফটওয়ার মনিটরিং কমিটির কাজকে আরও গতিশীল করবে, সর্বোপরি মামলাজট নিরসনে সহায়তা করবে।
দ্বিতীয় প্রযুক্তিটির মাধ্যমে অধস্তন আদালতের বিচারকরা অতি সহজেই তাদের দেয়া রায় ও আদেশ প্রস্তুতকৃত প্ল্যাটফর্মে আপলোড করতে পারবেন, যা বিচারপ্রার্থী জনগণ সহজেই দেখতে পারবেন।
আপিল বিভাগের প্রবেশ পাস, যার মাধ্যমে আপিল বিভাগের এজলাস সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং যেসব বিচারপ্রার্থী আপিল বিভাগে প্রবেশ করবে তাদের তথ্যগুলো আমাদের কাছে সংরক্ষিত থাকবে তৃতীয় প্রযুক্তির মাধ্যমে।
চতুর্থটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট অ্যাপস। সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন অনলাইন পরিষেবা ও তথ্য সহজ করার প্রয়োজনকে বিবেচনায় রেখে এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে থাকা সব তথ্য অতি সহজে পাওয়া যাবে। গুগল প্লে স্টোরে এই অ্যাপ উন্মুক্ত করা হবে।
পঞ্চমটি সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস্-এর জন্য প্রস্তুতকৃত একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। এর মাধ্যমে দেশের শিশু আদালতের মামলার পরিসংখ্যান এবং আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশুদের বিষয়ে নেয়া ব্যবস্থাসহ অন্যান্য পরিসংখ্যান কমিটির কাছে অতি সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে পাঠানো সম্ভব হবে।
সবশেষে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অনুলিপি শাখার কার্যক্রম গতিশীল, স্বচ্ছ ও জনবান্ধব করে তুলতে একটি সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আপিল বিভাগের রায় ও আদেশের অনুলিপি অতি সহজ প্রক্রিয়ায় সরবরাহ করা হবে। এতে একদিকে জনসাধারণ
উপকৃত হবে, অপরদিকে অনুলিপি শাখার কার্যক্রম আরও সহজে তত্ত্বাবধান করা যাবে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক আব্দুন নূর দুলালসহ সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।