ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ব্যবহার করা চিপ একবারই ব্যবহারযোগ্য। এই ভোটিং মেশিনে রি-রাইট (পুনরায় লেখা) বা এডিটের সুযোগ নেই। এমনকি এই যন্ত্রে সেট করা প্রোগ্রামিং পরিবর্তনেরও কোনো সুযোগ নেই।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর এসব কথা বলেন।
বিগত নূরুল হুদা কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের পাশাপাশি মাত্র ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করেছে। বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মুখেও বর্তমান আউয়াল কমিশন আগামী নির্বাচনে ভোটিং ব্যবস্থাপনায় ইভিএমের ব্যবহার বাড়াতে চায়।
ইসি অনধিক দেড় শ আসনে ইভিএমে ভোট করার ঘোষণা দিয়েছে। এ লক্ষ্যে ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার একটি নতুন প্রকল্প নিয়েছে, যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে রয়েছে।
ইসি আলমগীর বলেন, ‘অনেকেই বলেন যে এটা ভোট কারচুপির মেশিন। আসলে আমরা এখানে দায়িত্ব নেয়ার পর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অতীতের নির্বাচন থেকেও অভিজ্ঞতা নিয়েছি। তাতে দেখেছি যে ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কারিগরি দিক থেকে এক্সপার্টরাই এটা বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রথমেই যেটা বলা হয় তা হলো, প্রোগ্রামিং করে এর ফল উল্টে দেয়া যায়। তাত্ত্বিক দিক দিয়ে যারা বলেন তারা হয়তো ঠিকই বলেন। কিন্তু বাস্তবতার দিক দিয়ে এটা মোটেই ঠিক নয়।
‘আমাদের যে ইভিএম তা ভিন্ন ধরনের। অনেকেই বলেন যে এটা ভারতের ইভিএমের মতো। এটা ঠিক নয়। ভারতের ইভিএমে ভোটার আইডেন্টিফিকেশন করে ম্যানুয়ালি। আমাদের ইভিএমে আইডেন্টিফিকেশন করা হয় ইলেকট্রনিক্যালি। আমাদের ভোটার ডেটাবেস আছে ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ। ভোটারকে মেশিনই আইডেন্টিফাই করে, যেটা ভারতের ইভিএমে করার সুযোগ নাই।’
মো. আলমগীর বলেন, ‘এই ইভিএমে যে প্রোগ্রামিং করা হয়েছে তাতে শুধু যোগ করা যায়। শুধু শুধু প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটটা যোগ করতে পারে। ক্যালকুলেটরে যেমন প্রোগ্রাম পরিবর্তনের সুযোগ নেই, এ ক্ষেত্রেও তাই। কাজেই এতে বাইরে থেকে ম্যানিপুলেশনের সুযোগ নেই। ইভিএমের সঙ্গে ইন্টারনেটেরও কোনো সংযোগ নেই।
‘ব্যালট ইউনিটের সঙ্গে যে সংযোগ দেয়া হয় তা কাস্টমাইজ করা। বাজারে কেনা কোনো ক্যাবল, ড্রাইভ, কোনো কিছুই এটার মধ্যে ইনসার্ট করার সুযোগ নেই। এই ইভিএমের জন্য যে ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে, সেটা ছাড়া আর কোনো ডিভাইস কেউ যোগ করতে পারবে না।
‘ইভিএম নিয়ে যে অপপ্রচার আছে, যারা বলেন তারা না জেনে না বুঝে বলেন। তারা চাইলে যেকোনো ইভিএমে চেক করে দেখতে পারেন।’
মো. আলমগীর বলেন, ‘ইভিএমে ভোট নেয়ার সুবিধা হলো ভোটের আগে-পরে ভোট দেয়ার সুযোগ অথবা ভোটার ছাড়া কেউ এসে ভোট দিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। একটা দুর্বলতা আছে, গোপন বুথে যদি ভোটারকে ঢুকতে না দেয়া হয়। তবে ভোটার কেন্দ্রে না এলে সেই সুযোগও নেই। এটার মাধ্যমে জালিয়াতির কোনো সুযোগ নেই।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর এজেন্ট কারচুপিতে সহায়তা করলে বা কারচুপি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাই বলে এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রের বাইরে রাখা যাবে না। মশারির ভেতরে মশা ঢুকলে মশারি পুড়িয়ে দিলে তো হবে না। মশা তাড়াতে হবে। তেমনই কোনো এজেন্ট অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নিতে হবে।’