ফরিদপুরে বিএনপির সমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের এই লাখো জমায়েত বুঝিয়ে দিয়েছে আন্দোলন কী। সরকার পতনের ডাক শুরু হয়ে গেছে। আমরা আর ঘরে ফিরে যাব না। সরকার পতন করেই ঘরে ফিরব।
শনিবার দুপুরে ফরিদপুরের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফখরুল।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। জাতীয় সরকার কেমন হবে তা আগামী দিনে সমাবেশের মাধ্যমে আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্দেশনা দেবেন।’
ফরিদপুর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুরে আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দুর্ভিক্ষের কথা বলে জনগণের কাছ থেকে আপনাদের লুটপাটের কথা আড়াল করতে চাইছেন। কারণ আপনারা দেশের রিজার্ভ শুধু চিবিয়েই খাননি গিলে খেয়েছেন।’
আন্দোলনের লক্ষ্য নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাব না। সরকার পতনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করব। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করব। তারপর জাতীয় সরকার গঠন করব। আর আমরাই এ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেব।’
এ সময় তিনি খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেয়া এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না বলেও দাবি করেন।
উপস্থিত লোকজনের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘এবার সময় এসেছে নতুন করে যুদ্ধ করার। আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা আর ওদের হাতে শৃঙ্খলের জিঞ্জির। তারা মনে করে, এদেশ তাদের। এদেশ তাদের বাপের দেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার আর রাতের ভোট হবে না। আমরা রুখে দাঁড়াব। দেশনেত্রীকে মুক্ত করব। আমাদের এক দফা এক দাবি- ফয়সালা হবে রাজপথে। টেক ব্যাক বাংলাদেশ।’
এর আগে সমাবেশের জন্য নির্ধারিত সময় বেলা ২টা হলেও ১১টার মধ্যেই সমাবেশ শুরু হয়ে যায়। সকালেই কানায় কানায় ভরে যায় সমাবেশস্থল। মাঠটিতে গত কয়েক দিন ধরেই জড়ো হচ্ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
লোডশেডিং, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় এই সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি। এর আগে চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও বরিশালেও এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সমাবেশের কয়েকদিন আগে থেকেই সমাবেশস্থলে জড়ো হচ্ছিলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা
ফরিদপুরের সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি আওয়ামী লীগকে সিন্দাবাদের ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘নির্বাচনের কথা বলেলেই আমাদের গলা চেপে ধরার দিন শেষ। এখন গদি ছাড়ার সময় হয়েছে আপনাদের। পালানোর পথ খুঁজেন। এ দেশের জনতা আজ জেগে উঠেছে। ১৫ বছর আগে ভোটার হওয়া যুবকরা আর ভোট দিতে পারেনি। ভোট রাতের আঁধারে আপনারাই চুরি করে নিয়েছেন। নিজেরাই ভোট দিয়েছেন।’
সরকারের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস আরও বলেন, ‘ফরিদপুরে আসুন, দেখে যান। আমাদের সমাবেশকে বাধা দিতে যে দোকানদারদের দোকান বন্ধ রাখতে বলেছিলেন, তারা আজ দোকান বন্ধ করে সমাবেশে এসেছে। আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এ দেশের জনগণের অধিকারের যুদ্ধ। আর যুদ্ধে আমারাই জয়ী হব ইনশা আল্লাহ।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গণসমাবেশের প্রধান সমন্বয়কারী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির দুই সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান।
এ ছাড়া কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব এ কে এম কিবরিয়া স্বপন, মহিলা দলের সহসভাপতি ইয়াসমিন আরা হক, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু, কোতোয়ালি থানা বিএনপির সভাপতি রউফউনবী, মহানগর যুবদলের সভাপতি বেনজির আহমদ তাবরীজ ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ আরও অনেকেই বক্তব্য দেন।