টানা উঠতে থাকার পর অবশেষে লিটার প্রতি ৫ টাকা কমেছে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েলের দাম। অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য জেট ফুয়েলের নতুন দর ঠিক করা হয়েছে ১২৫ টাকা আর আন্তর্জাতিক রুটের জন্য ৯৬ সেন্ট।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বৃহস্পতিবার নতুন এ দর ঘোষণা করে। শুক্রবার থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
গত বছর থেকেই ক্রমাগত বাড়ছিল জেট ফুয়েলের দাম। সবশেষ গত ২৬ অক্টোবর জেট ফুয়েলের দাম অভ্যন্তরীণ গন্তব্যের জন্য ১৩০ টাকা আর আন্তর্জাতিক গন্তব্যের জন্য এক ডলার নির্ধারণ করা হয়।
তবে জেট ফুয়েলের দাম ৫ টাকা কমলেও একে পর্যাপ্ত বলছে না দেশি এয়ারলাইনসগুলো। দেশি এভিয়েশন অপারেটরদের জোট বাংলাদেশ এভিয়েশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (এওএবি) সেক্রেটারি জেনারেল মো. মফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেট ফুয়েলের দাম লিটারে এক টাকা কমলেও আমাদের জন্য অনেক। আমাদের থেকে যেহেতু প্রেসার ছিল তাই তারা রুটিন হিসেবে এটি কমিয়েছেন। এটাকে ঠিক কমানো বলা যাবে না।
‘কিছুদিন আগে অযৌক্তিকভাবে যে ৫ টাকা দাম বাড়ানো হয়েছিল সেটিকেই আবার সমন্বয় করা হয়েছে। তবে আমরা যে লেভেলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে বলেছিলাম সেটা করা হয়নি। এটা আমাদের এক্সপেকটেশনকে ফুলফিল করে না।’
জেট ফুয়েল সাধারণত বিদেশ থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন। আর তা এককভাবে এয়ারলাইনগুলোতে সরবরাহ করে পদ্মা অয়েল লিমিটেড। সম্প্রতি প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জেট ফুয়েল উৎপাদন শুরু করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পারটেক্স পেট্রোলিয়াম। প্রতিদিন ২ হাজার ৮শ ব্যারেল জেট ফুয়েল উৎপাদন করবে প্রতিষ্ঠানটি।
এয়ারলাইনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ৯ হাজার ব্যারেল জেট ফুয়েলের চাহিদা রয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে বেসরকারি তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পারটেক্স পেট্রোলিয়ামের কাছ থেকে সরাসরি জেট ফুয়েল কেনার অনুমতি চেয়ে চিঠি দেয় এওএবি।
এওএবি সেক্রেটারি জেনারেল মো. মফিজুর রহমান বলেন, ‘বিপিসি এটা কেনে বেশি দামে, আর আমাদের কাছে বিক্রিও করে বেশি দামে। এ জন্য আমরা নিজেরাই এটা কিনতে চাই সেটা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে হোক বা দেশি বাজার থেকে। আগে এটা দেশি বাজারে ছিল না এখন সেটা এভেইলেবল আছে। যদি এটা অল্প দামে পাওয়া যায় তাহলে আমরা বেশি দামে কিনে কেন ক্ষতিগ্রস্থ হবো।’
এয়ারলাইনসগুলো বলছে, অভ্যন্তরীণ জ্বালানির অতি মূল্যায়নের ফলে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম যাত্রীর ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে যাত্রী সংখ্যা সাধারণ চাহিদার এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এর ফলে সরকারের সার্বিক কর আদায় প্রতি মাসে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকারও কম হবে।
এর আগে, এ বছরের ১০ জুন ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের দাম নির্ধারণ করা হয় ১১১ টাকা। তার আগে ১৭ মে লিটারে ৬ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৬ টাকা।
জ্বালানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েল বলছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জেট ফুয়েলের দাম ছিল ৫৫ টাকা, মার্চে তা বেড়ে হয় ৬০ টাকা। এপ্রিলে তা ছিল ৬১ টাকা।
মে মাসে দাম এক টাকা কমে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।
জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে উড়োজাহাজের টিকিটের দামে। করোনার আগে যেখানে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ২ হাজার ৭শ টাকা। সেটিই এখন ৫ হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে আকাশপথের যাত্রীও উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে বলে দাবি দেশি এয়ারলাইনগুলোর।