গ্রামপর্যায়ে চিকিৎসাসেবা বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের সেবা দিতে কুষ্টিয়ায় যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে বিভিন্ন সংস্থা। প্রায়ই গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। সঙ্গে নেয়া হচ্ছে পোর্টেবল ইসিজি মেশিনসহ আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম। গ্রামে বসানো হচ্ছে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। চিকিৎসাসেবা ছাড়াও গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে এসব উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কুষ্টিয়ায় গ্রামের মানুষের হাতের নাগালে নেয়া হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। বাড়ির পাশে যেমন ‘ফি’ না দিয়েই তারা দেখাতে পারছেন ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, তেমনি বিনা মূল্যে পাচ্ছেন ইসিজি, সনোগ্রাফি, রক্ত পরীক্ষার সুযোগ। কুষ্টিয়া ডায়াবেটিক হাসপাতাল, রুরাল হেলথ কেয়ার সেন্টারসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ রকম বেশ কয়েকটি হেলথ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে।
শহরে-গ্রামে প্রায়ই আয়োজন করা হয় সচেতনতা সভা ও সেমিনারের। সম্প্রতি এমন একটি সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এস এ ওয়াজেদ এসেছিলেন কুষ্টিয়ায়। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির এমন মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের চিকিৎসাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ও সচেতনতা বাড়াতে তারা কাজ করছে। এটা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই একটি অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।’
তার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, আফ্রিকার দেশগুলোর পর সবচেয়ে বেশি ৯ কোটি ডায়াবেটিক রোগী আছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এর মধ্যে বাংলাদেশেই আছে ১ কোটি। প্রান্তিক পর্যায়ে হাতের নাগালে ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি। এসব আয়োজনে প্রায়ই আসেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির চেয়ারম্যান ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
গত মাসে কুষ্টিয়ার মিরপুরে এক আয়োজনে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। অসচেতনতা ও দীর্ঘমেয়াদি জটিলতায় মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে দুশ্চিন্তাও বাড়ছে। ডায়াবেটিসের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার ওপর জোর দেওয়ার এখন সময় এসেছে। ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও চিকিৎসা প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
‘এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবা ও সচেতনতা বাড়াতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মাঝে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে রুরাল হেলথ কেয়ার মেডিক্যাল সার্ভিসের মাধ্যমে কাজ শুরু করেছে। আশা করছি এর মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশ চিকিৎসাসেবা পাবে এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন হবে।’
সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর ও খোকসা উপজেলায় আধুনিক ডিজিটাল যন্ত্রপাতির মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়েছে রুরাল হেলথকেয়ার মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার। এ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র চালুর ফলে গরিব মানুষের পাশাপাশি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য গ্রামেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসাসেবার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জাতীয় অধ্যাপক আজাদ খান নিজে গ্রামের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা দেন।
কুষ্টিয়া জেলা ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান লাল্টু বলেন, ‘সরকারিভাবে যদি উদ্যোগ নিয়ে গ্রামে হেলথ সেন্টার করা হয়, তাহলে প্রান্তিক অনেক মানুষ উপকৃত হবেন। অনেকে জানেনই না তারা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো গেলে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা বাড়ানো গেলে প্রান্তিক মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে উঠবে এবং তাদের সঠিক চিকিৎসা পাবে।’
গত সপ্তাহে খোকসা উপজেলার শোমসপুর ইউনিয়নের কাদিরপুর এলাকায় রুরাল হেলথ কেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে।
এ সময় এটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আহসান নবাব বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সহযোগিতায় মেধাবী দক্ষ চিকিৎসক দ্বারা ডিজিটাল যন্ত্রপাতির মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। গ্রাম অঞ্চল থেকে যারা শহরে চিকিৎসা নিতে যান, তাদের আর কষ্ট করে দূর-দূরান্তের পথ পাড়ি দিতে হবে না। তারা সহজেই এখান থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন।’
দুই মাস আগে মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ানে রুহিনা মেমোরিয়াল হাসপাতাল নামে একটি হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটির প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, ‘গ্রামের মানুষ যাতে সচেতন হয়, ভালো স্বাস্থ্যসেবা পায়, সে জন্য প্রফেসর আজাদ খানের আহ্বানে তিনি এটি করছেন।’