রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রধানমন্ত্রী হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সরকার বাড়াবাড়ি করছে। হুমকি-ধমকি দিয়ে আন্দোলন দমানো যাবে না। শেখ হাসিনা যদি মনে করে থাকেন হুমকি-ধমকি দিয়ে দমানো যাবে, তাহলে তিনি ঠিক জায়গায় বাস করছেন না।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের আন্দোলন শুরু হয়েছে। এটা দমানোর সক্ষমতা কারো নেই। জনগণ জেগে উঠেছে। যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে তারা দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর। আমরা একটা লক্ষ্যে অটল-অবিচল।’
‘বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে ফিরতে হবে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) বাড়াবাড়ির কথা বলেছেন। বাড়াবাড়ি বলতে উনি কী বলছেন তার ব্যাখ্যা উনি দেবেন। আমরা ফাঁদে পা দেব না। চলমান আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তিনি এ ধরনের কথা বলছেন।
‘বাড়াবাড়ির কথা বলছেন উনি। বাড়াবাড়ি করছে রাষ্ট্র। আওয়ামী লীগের সরকার অহেতুক রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। পুরোপুরি বাড়াবাড়ির মাধ্যমে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে সাংবিধানিক অধিকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশে তারা বাধা দিচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘বরিশালে আমাদের সমাবেশ। আর পাঁচ দিন আগে থেকে পরিবহন বন্ধ, প্রাইভেট কার বন্ধ। এটাকে কিভাবে তারা ব্যাখ্যা করবেন?
‘তারা কী একটা যেন বলে- আমরা তো করিনি, ওরা করেছে। আপনারা তো সব জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করছেন। এসব ভোঁতা যুক্তি দিয়ে লাভ নেই। জনগণ জেগে উঠেছে, যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে তারা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই উক্তি থেকে প্রমাণ হয়েছে যে তারা কতটা প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, তারা বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।
‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে এমন সময়ে এ ধরনের উক্তি করা হয়েছে যখন দেশে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন শুরু হয়েছে, যখন মানুষ তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।’
‘চাল, ডাল, তেলের দাম আকাশচুম্বী। গতকাল আবার সরকার চিনির দাম কেজিতে ১৪ টাকা বাড়িয়েছে। জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট- সবমিলিয়ে দেশে যখন চরম অব্যবস্থাপনা, চরম অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে; সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের হুমকি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার ভীত হয়ে পড়েছে। এজন্য আমাদের প্রতিটি সমাবেশে তারা পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। নানারকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।’
বিচারপতি মানিকের ওপর হামলা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পরশু পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশের পর এই হামলার কথা বলা হয়েছে। আপনারা কেউ তা দেখছেন কিনা জানি না। তবে আমি যত লোকজনকে জিজ্ঞেস করেছি কেউই দেখেনি যে বিচারপতি মানিকের গাড়িতে হামলা হয়েছে।
‘এ নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে তিনি যে বিবৃতি দিলেন তা-ও স্ববিরোধী। তিনি আসার পথে বললেন পুলিশ ছিল, আবার বলছেন কেউ ছিল না। এই ঘটনা কেন্দ্র করে ওই রাতে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ হামলা করেছে, ১০-১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং ১১ জন রিমান্ডে।’
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা প্রতিটি ক্ষেত্রে পদে পদে দুর্নীতি করছে। আজও পত্রিকায় বেরিয়েছে যে গত ১০ বছরে কানাডায় যারা অভিবাসী হয়েছে তাদের তিন ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশি। বিদেশি আমাদের শ্রমিক সংখ্যা কিন্তু কমেনি, বরং বেড়েছে। তাহলে রেমিটেন্স কোথায় যাচ্ছে? ওই রেমিটেন্স বিদেশ থেকেই বিদেশে পাচার হচ্ছে। এবং পাচার করছেন সরকারের সঙ্গে জড়িতরা। তারাই হুন্ডি করে পাচার করছেন।’