বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঋণ নিতে ‘বাড়তি খরচ দিতে হয় তাকে’

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২২ ২০:১৯

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কটিয়াদী শাখার ঋণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন লোনের ক্ষেত্রে দ্রুত পাইয়ে দেয়ার নাম করে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে দ্রুত ঋণ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘুষ দিতে না চাওয়ায় এক শিক্ষকের সঙ্গে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

তার মাধ্যমে ঘুষ দাবির অভিযোগ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেই কর্মকর্তা।

কটিয়াদী বাজার শাখার প্রিন্সিপাল কর্মকর্তা (ঋণ কর্মকর্তা) মো. সজিব মিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে এসব অভিযোগ।

২৩ অক্টোবর এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখার ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকীর কাছে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন স্থানীয় পাইকসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদ কামাল।

তিনি জানান, তার স্ত্রী মুমুরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সালমা আক্তারের নামে ৩ লাখ ২০ হাজার ঋণের ব্যাংকে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে কথা হয় সজিব মিয়ার সঙ্গে।

আবেদন ফরমসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও অনুমতিপত্র নিয়ে ব্যাংকে জমা দেন তিনি। এ সময় সজিব মিয়া একটি স্লিপ দিয়ে তাতে প্রধান শিক্ষকের প্রত্যয়ন, নিয়োগপত্রের কপি ও জিপিএফ ফান্ডের স্টেটমেন্ট জমা দিতে বলেন।

তবে ঋণের জন্য এসব কাগজ জমা দেয়ার দরকার পড়ে না। আর শেষ পর্যন্ত এসব কাগজ ছাড়াই ঋণ দেয়া হয়। কিন্তু তার আগে ঘটে নানা ঘটনা।

মাহমুদ কামালের অভিযোগ, ঋণের জন্য তো এসব কাগজ নেই- এ কথা বললে সজিব বলেন, তাহলে ঋণ মিলবে না। একপর্যায়ে কাগজপত্র ছুড়ে ফেলে দেন।

পরে এ বিষয়টি ম্যানেজারকে জানালে তিনিও একই আচরণ করেন বলে অভিযোগ করেন। তখন সজিব মিয়া বলেন, ‘আপনাকে লোন দেব না, আপনি যা পারেন করেন।’

ম্যানেজারের উপস্থিতিতে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি একটা স্টুপিড, অথর্ব মানুষ। আপনার লোন হবে না।’

পরে ম্যানেজার দুই ঘণ্টা বসিয়ে রেখে তারা নিজেরা নিজেরা আলোচনা করে আবারও সেই স্লিপ ধরিয়ে দেন। এভাবে তাকে ১৫ দিন দেরি করান সজিব। পরে ইঙ্গিতে টাকাপয়সা দাবি করেন।

মাহমুদ কামাল বলেন, ‘পরে জানতে পারলাম বিভিন্ন লোনের ক্ষেত্রে দ্রুত পাইয়ে দেয়ার নাম করে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন সজিব মিয়া।’

একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, দুই সপ্তাহ আগে আরেক সহকর্মীর ঋণের জন্য গ্যারান্টার হতে ব্যাংকে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনিও দুর্ব্যবহারের শিকার হন।

কটিয়াদী উপজেলার পূর্বপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম শিপন জানান, ছয় মাস আগে তিনি তার স্ত্রীর নামে ঋণের জন্য সজিব মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ সময় তাকে বলা হয়, দ্রুত ঋণ নিতে হলে খরচ দিতে হবে। পরে আট লাখ টাকা লোন তুলতে সাড়ে চার হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে।

উপজেলার চরআলগী গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই জানান, দুই বারে তিনি ১৫ লাখ টাকা ঋণ তুলেছেন। এতে সরকারি খরচের বাইরেও সজিব মিয়াকে সাত হাজার টাকা বাড়তি দিতে হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, ‘সজিব মিয়াকে ঘুষ না দিয়ে ঋণ পাওয়া শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম।’ নীবর থাকার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘যারা প্রতিবাদ করেছেন তারাই দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন অথবা দেরিতে টাকা পেয়েছেন।’

জানতে চাইলে সজিব মিয়া সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই শিক্ষকের স্ত্রীকে ঋণ দেয়া হয়েছে।’

পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘ওই শিক্ষকের সঙ্গে আমি দুর্ব্যবহার করিনি, বরং তিনি আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলেছেন।’

কটিয়াদী বাজার শাখার ম্যানেজার রাশেদ আহমেদ বলেন, ‘সজিব আমার ব্যাংকের স্টাফদের মধ্যে সবচেয়ে কর্মট এবং অত্যন্ত ভালো। তার বিরুদ্ধে লিখিত তো দূরের কথা, এখন পর্যন্ত কেউ মৌখিক অভিযোগও করেনি। সেদিন মাহমুদ কামাল সাহেবের সঙ্গে তার খানিকটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে আমি মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। পরে স্ত্রীকে ঋণ দেয়া হয়েছে।’

সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘একজন সহকারী শিক্ষকের পক্ষ থেকে সজিব মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর