বরিশালে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের সময় বিভিন্ন দাবি তুলে ধর্মঘট ডাকা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ পদে থাকা নেতারা সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দলের বিভিন্ন ইউনিট কমিটিগুলোতে রয়েছে তাদের পদও।
বিএনপির নেতারা বলছেন, যে সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে থাকে তারা তো বিএনপির সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টাই করবেই। তবে আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপির সমাবেশ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
বরিশালে ৫ নভেম্বর নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে হতে যাচ্ছে বিএনপির ষষ্ঠ বিভাগীয় সমাবেশ। গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের সমাবেশটি হয়েছে নির্বিঘ্ন। তবে ১৫ অক্টোবর ময়মনসিংহ, ২২ অক্টোবর খুলনা, ২৯ অক্টোবর রংপুরের মতো এই সমাবেশের সময় পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, সরকার প্রভাব খাটিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনে পেট্রলবোমায় বাস পোড়ানোর ঘটনায় মালিকেরা বিএনপিকে ভয় পায়। যদিও যেসব কথা বলে ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে, তাতে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন বন্ধের দাবি তোলা হচ্ছে।
বরিশালে বাস মালিকদের দুটি সংগঠনের পাশাপাশি তিন চাকার গাড়ির মালিক ও শ্রমিক সমিতিও দিয়েছে ধর্মঘটের ডাক। লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারাও বলছেন, যেকোনো সময় তারাও যেতে পারেন ধর্মঘটে।
বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে আমাদের ডাকা ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই। বাস মালিকদের মধ্যে তো বিএনপি নেতারাও আছেন। রাজনীতির সঙ্গে পেশাজীবী সংগঠনকে জড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
‘মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে, আমাদের লোকসান হচ্ছে। এই কারণে থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছি।’
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, এই ধর্মঘটের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। বাস মালিক সমিতিতে বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি সব দলের নেতারা রয়েছেন। তারা তাদের দাবি আদায়ে ধর্মঘট ডেকেছে। সরকারের আদেশ পছন্দ না হলে যেখানে সারা দেশে তারা চাকা বন্ধ করে দেয়, সেখানে আমাদের হস্তক্ষেপ থাকাটা অবাস্তব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, ‘আমরা তো নিশ্চিত করে বলছি বাস বা থ্রি-হুইলার ধর্মঘটের পেছনে সরকারের ইনডাইরেক্টলি হাত রয়েছে। সরকারদলীয় লোকজন পরিবহন সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে বসা। তারা তো আমাদের সমাবেশ বানচাল করার চেষ্টা করবেই।’
তিনি বলেন, ‘পরিবহন সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলে। তাদের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু। তবে এসব করে কোনো লাভ নেই, মানুষ সাঁতরে হলেও সমাবেশে যোগ দেবে।’
মালিক-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কারা
৪ ও ৫ নভেম্বর ধর্মঘট ডাকা বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি গোলাম মাসরেক বাবলু এবং সাধারণ সম্পাদক কিশোর কুমার দে আওয়ামী ঘরানার। এদের এই কমিটি অনুমোদনে সুপারিশ করেছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার বাস মালিকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন এই কিশোর কুমার দে। আর এই দুটি সংগঠনেরই সভাপতি বরিশালের সিটি মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মোমিনউদ্দিন কালু বরিশাল মহানগর যুবলীগের সদস্য। তিনি প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের ঘনিষ্ঠ সহচর। বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গেও তার সম্পর্ক গভীর । এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক।
থ্রি-হুইলার মালিক সমিতির সভাপতি আহম্মেদ শাহরিয়ার বাবু বরিশাল সদর উপজেলার রায়পাশা কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
থ্রি-হুইলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন লিটন মোল্লা সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি।
এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক।
লঞ্চ ধর্মঘটেও আভাস
বাস এবং থ্রি-হুইলারের মতো লঞ্চ চলাচলও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আভাস মিলেছে বরিশালে। জেলা লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেছেন, ‘জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও যাত্রী সংকটের কারণে প্রতিদিন বিপুল লোকসান দিচ্ছে লঞ্চ। এই পরিস্থিতিতে যে কোনো সময় লঞ্চ চালানো বন্ধ করে দিতে পারি আমরা।’
জনাব রিন্টু বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।