ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকচাপায় মায়ের পেট ফেটে জন্ম নেয়া শিশু ফাতিমার ক্ষতিপূরণের পাঁচ লাখ টাকা ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক শিশু ও দুই সন্তানের সহায়তা হিসাবে’ ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি পোস্ট দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
পোস্টে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘‘ট্রাস্টি বোর্ড, বিআরটিএ তহবিল থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত পিতা-মাতার নবজাতক শিশুর অভিভাবককে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রাপ্ত পাঁচ লাখ টাকার ক্রস চেক সোনালী ব্যাংক, ত্রিশাল শাখায় ‘রত্না আক্তার রহিমার নবজাতক শিশু ও অপর দুই সন্তানের সহায়তা হিসাব’-এ জমা আছে। এই টাকার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের প্রদত্ত টাকাও ওই অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে।’’
আরও বলা হয়, ‘এই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করছেন শিশুর অভিভাবক দাদা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ত্রিশাল। এখানে অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। যৌক্তিক প্রয়োজনে শিশু ও তার পরিবারের কল্যাণের জন্য এই অ্যাকাউন্ট থেকে খরচ করা হবে।’
২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এই হিসাবে ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০২ টাকা জমা হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এর মধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ২৫ টাকা। বর্তমানে জমা আছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৭ টাকা। শিশুটি বর্তমানে সরকারি খরচে ঢাকার ছোটমণি নিবাসে চিকিৎসাসহ উন্নতমানের সেবাসহ লালিতপালিত হচ্ছে।
‘নবজাতকের দাদিকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড দেয়া হয়েছে। ওই পরিবারের যেন কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য একটি পাকা ঘর তৈরি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।’
এর আগে শিশু ফাতেমার কল্যাণে ব্যয় করার জন্য ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ড। গত ৩১ আগস্ট ওই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। তবে জেলা প্রশাসক সেই টাকা ‘শিশু ফাতেমার কল্যাণে ব্যয়ের ব্যবস্থা না করে শিশুর পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে জমা রেখেছেন’- এমনটি জানিয়ে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে রিট করা হয়।
সেই রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন। পরে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসককে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে শিশু ফাতেমাকে দেয়া টাকার বিষয়ে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেয়।
আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসাইন নিউজবাংলাকে সেদিন বলেন, ‘শিশু ফাতেমার কল্যাণের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশে ৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। সেই টাকা ওই শিশুর কল্যাণে ব্যয় না করে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক শিশুটির পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে জমা রেখেছেন।
‘আমাদের বক্তব্য হলো এই টাকা দেয়া হয়েছে এই শিশুর কল্যাণে ব্যয় করার জন্য। সেটা না করে যদি তা ব্যাংকে রেখে দেয়া হয়, ১৮ বছর পর এই টাকার মূল্য কী হবে? তা ছাড়া সে সময় এই টাকা ওই শিশুর জীবনে যতটা না কাজে আসবে তার থেকে এখন টাকাটা বেশি প্রয়োজন। এ কারণে বিষয়টি আমরা আদালতের নজরে আনি।’
চলতি বছরের ১৬ জুলাই ত্রিশাল পৌর শহরের খান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ওই দুর্ঘটনায় ত্রিশালের রাইমনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী রত্না বেগম এবং মেয়ে সানজিদা খাতুন মারা যায়। মৃত্যুর আগে রত্নার গর্ভ ফেটে ভূমিষ্ঠ হয় নবজাতক। পরে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে নেয়া হয় হাসপাতালে।
একটি বেসরকারি হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসা দেয়ার পর ১৯ জুলাই শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ২৯ জুলাই স্বজনদের সম্মতিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিশুটিকে রাজধানীর আজিমপুরে ছোটমণি নিবাসে পাঠায় জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড। বর্তমানে সেখানেই বেড়ে উঠছে শিশু ফাতিমা।