বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রিজার্ভ কেউ চিবিয়ে খায়নি: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ১২:১২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঘরের টাকা ঘরে থাকবে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। এটা হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন যে রিজার্ভের টাকা কেন খরচ করা হচ্ছে? বা রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়? যারাই প্রশ্ন করলেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়? তাদের বলছি, রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে মানুষের খাদ্য কেনায়, সার কেনায়, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য। এটাকে কেউ চিবিয়ে খায়নি, এটা মানুষের কাজেই লাগছে, মানুষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের আমদানিতে, বিভিন্ন কাজে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।’

রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল বলে যারা সমালোচনা করেন, তাদের জবাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রিজার্ভের অর্থ কেউ চিবিয়ে খায়নি। এই অর্থ দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, খাদ্য কেনা, সার কেনা, আমদানিসহ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা ভেবে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়েছেন সরকারপ্রধান।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বৃহস্পতিবার সকালে পায়রা বন্দরের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিত স্থাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, নিজস্ব এই অর্থ দিয়েই পায়রা সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই টাকা দিয়েই যেহেতু প্রথম কাজটি আমরা শুরু করলাম, ভবিষ্যতে এভাবেই নিজেদের রিজার্ভের টাকা, এই টাকাও আমরা আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি। সেটা আমরা বন্দরকে লোন দিয়েছি খুব অল্প সুদে। ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ বাদে ২ শতাংশ তাদের দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঘরের টাকা ঘরে থাকবে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। এটা হয়তো অনেকে ভাবতে পারেন যে রিজার্ভের টাকা কেন খরচ করা হচ্ছে? বা রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়? যারাই প্রশ্ন করলেন রিজার্ভের টাকা গেল কোথায়?

‘তাদের বলছি, রিজার্ভের টাকা গেল পায়রা বন্দরে। রিজার্ভের টাকা গেছে মানুষের খাদ্য কেনায়, সার কেনায়, মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য। এটাকে কেউ চিবিয়ে খায়নি, এটা মানুষের কাজেই লাগছে, মানুষের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের আমদানিতে, বিভিন্ন কাজে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।’

বাংলাদেশকে রক্ষায় শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে উন্নয়নটা হবে সুষম উন্নয়ন। সব অঞ্চলের মানুষ সমানভাবে উন্নত জীবন পাবে। প্রতিটি গ্রামে যারা বাস করে তারা নাগরিক সুবিধা পাবে। আমার গ্রাম আমার শহরে পরিণত হবে।’

যুদ্ধ বন্ধ করুন, নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন

সারা বিশ্বের অগণিত সাধারণ মানুষের কথা ভেবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে, আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হলেও বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও জ্বালানিসংকটে ভুগছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করে সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। একদিকে করোনা মহামারি, অতিমারির প্রভাব। এরপর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সেই সঙ্গে স্যাংশান। যার ফলে আজকে সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী। তারা কষ্টে আছেন।’

এই যুদ্ধ কাদের স্বার্থে তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘(এই যুদ্ধে) কারা লাভবান হচ্ছে জানি না। হয়তো লাভবান হচ্ছেন, যারা অস্ত্র ব্যবসা করেন বা অস্ত্র বানান। সাধারণ মানুষ কিন্তু, শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বব্যাপী সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।’

বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে আমার আবেদন থাকবে বিশ্ববাসীর কাছে, এই যুদ্ধটা বন্ধ করতে হবে, স্যাংশান প্রত্যাহার করতে হবে। মানুষকে বাঁচার সুযোগ দিতে হবে, জীবনমান ধরে রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা আমি মনে করি, আমাদের উন্নত বিশ্ব এই যুদ্ধংদেহি ভাব নিয়ে যারা পথে নেমেছেন, তাদের কাছে আমার এই আবেদন থাকল।

‘আমি এটা চাই, মানুষ বাঁচুক, সুন্দরভাবে বাঁচার সুযোগ করে দেয়া হোক, এই অস্থিরতা বন্ধ হোক। যেন শান্তির সুবাতাস বয়ে যেতে পারে, মানুষের জীবনমান উন্নত হতে পারে, সেটাই আমরা চাই।’

পূর্ণাঙ্গ সমুদ্রবন্দরের পথে পায়রা

২০১৩ সালের নভেম্বরে তৃতীয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশে স্থাপিত দেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর হিসেবে পায়রার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ফিজিবিলিটি স্টাডি সম্পন্ন করে তৈরি করা হয় মাস্টার প্ল্যান।

পরিকল্পনামাফিক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দেশি-বিদেশি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে বন্দর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে বন্দরের প্রশাসনিক ভবন, ওয়্যার হাউস, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান এবং জেটির মতো অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামোগুলো। দেশি-বিদেশি শিপইয়ার্ডে নির্মাণ করা হয়েছে বন্দরের নিজস্ব ৮টি সহায়ক জাহাজ, প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে কাস্টম, ইমিগ্রেশন ও ব্যাংকসহ বন্দর সহায়ক নানা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি বাণিজ্যিক জাহাজের নির্বিঘ্ন চলাচলে বন্দরের চ্যানেলের গভীরতা ৮ মিটার বজায় রাখা হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত এ বন্দরে চলাচল করছে পণ্যবাহী জাহাজ। এদিন এসব প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সরকারপ্রধান।

এ ছাড়া বন্দরকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে ৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, ৬ লেনের সংযোগ সড়ক, আন্দারমানিক নদীর ওপর সেতু ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজের ভিত স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পর্যায়ক্রমে কনটেইনার টার্মিনাল, বার্গ টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনালসহ তৈরি করা হবে অন্যান্য অত্যাধুনিক অবকাঠামো।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বন্দর তৈরি করার চিন্তা-ভাবনা যখন করি অনেকেই বাধা দিয়েছেন। বলেছেন, সেখানে বন্দর হওয়া সম্ভব নয়। কারণ এখানে অনেক সিলড আছে। বিশেষ করে আমাদের রামনাবাদ চ্যানেল আন্ধারমানিক নদী এখানে এত বেশি সিলড, যেগুলো অপসারণ করে খুব বেশি নৌ চলাচলের সুযোগ করা যাবে না। কিন্তু আমার একটা দৃঢ় বিশ্বাস ছিল।

‘কারণ আমি নিজেই এসব অঞ্চল অনেক ঘুরেছি। প্রতিটি নদীতে আমি স্পিড বোটে করে আমি বিভিন্ন চরগুলোতে গিয়েছি, দেখেছি। তখন থেকে আমার একটা ইচ্ছা ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে সব সময় শুনতাম এ অঞ্চলের কথা। আমার বাবার মুখে শোনা, কাজেই তখন থেকে আমার চিন্তা এখানে একটা বন্দর আমাদের হওয়া দরকার বা ওই অঞ্চলে।’

এর মধ্যে পায়রা বন্দরে ২৬০টি বৈদেশিক বাণিজ্যের জাহাজের আগমনে ৬১৩ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আয় হওয়ায় আনন্দিত প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘রামনাবাদ চ্যানেলে যে গভীরতা সেটা ৬ দশমিক ৩ মিটার ধরে রাখার জন্য ইতোমধ্যে মেনটেইনেন্স ড্রেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে, যা এখনও স্থিতিশীল আছে। অনেকের ধারণা ছিল ড্রেজিং করে দিলে পরে আবার পুনরায় সিলড হয়ে যাবে।

‘আমার কথা হচ্ছে এটা আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই যখনই আমরা কোন ড্রেজিং করব আমাদের প্রথমে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে। এবং প্রতি বছর আমাদের মেনটেইন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে। তাহলে আমাদের নৌপথ গুলো সচল রাখা সম্ভব।’

পায়রা বন্দরের সক্ষমতাকে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চ্যানেলটিতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘যা দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ড্রেজিং কাজ। এর ফলে বন্দর থেকে সাগরের মধ্যে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ১০০ থেকে ১২৫ মিটার প্রশস্ত এবং কমবেশি ১০ দশমিক ৫০ মিটার গভীরতার চ্যানেল সৃষ্টি হবে। এতে বন্দরে ৩০০০ টিইইউ বা ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিকটন কার্গো বহনক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ ভেড়ানোর সক্ষমতা এই বন্দর অর্জন করবে।’

রামনাবাদ চ্যানেলে ক্যাপিটাল ড্রেজিং ও মেনটেইনেন্স ড্রেজিংয়ের কাজে সহযোগিতা করছে বেলজিয়ামভিত্তিক বিশ্বখ্যাত একটি ড্রেজিং কোম্পানি। এ জন্য বেলজিয়াম সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এটা কিন্তু প্রতিবছরই ড্রেজিং করতে হবে। এ জন্য পায়রা বন্দরের জন্য নিজস্ব ড্রেজার সংগ্রহ করতে হবে। প্রত্যেক বন্দরের জন্য আলাদা নিজস্ব ড্রেজারের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের মোংলা বন্দরেও নিজস্ব ড্রেজার ছিল না। আমি মনে করি, ড্রেজার রাখা দরকার। কারণ প্রতি বছরই মেনটেইনেন্স ড্রেজিংটা আমাদের নিয়মিতভাবে করে যেতে হবে।’

ড্রেজিং হয়ে গেলে নৌপথটা উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া কথা জানান দেশের টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি এর মাধ্যমে আসাম এবং ভুটান পর্যন্ত কিন্তু নৌপথ চালু হতে পারে। আমরা যেমন আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর ও মোংলা বন্দর ভুটান, নেপাল ও ইন্ডিয়াকে ব্যবহার করবার জন্য আমরা তাদের সুযোগ দিয়েছি। পায়রা বন্দরটাও কিন্তু একসময়, যেহেতু এটির একপাশে মোংলা, এক পাশে চট্টগ্রাম বন্দর, ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় হচ্ছে পায়রা বন্দর। ফলে এটি কিন্তু অন্য ধরনের একটা গুরুত্ব বহন করবে। সেটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।’

নদীমাতৃক দক্ষিণাঞ্চলে মাটির কারণে রেল যোগাযোগ তৈরি করা কষ্টসাধ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবুও এটার ওপর সীমাক্ষা চলছে। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনা আছে যে একেবারে ঢাকার সঙ্গে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলসেতুও চালু করব।

‘আমি নৌপথকে সব থেকে গুরুত্ব দিই। কারণ নৌপথ সব থেকে অল্প খরচে করা যাবে। আর এখান থেকে নৌপথে সমগ্র বাংলাদেশে আমরা যোগাযোগ করতে পারব।’

এ বিভাগের আরো খবর