জাতীয় পার্টির সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি পাওয়া প্রতাবশালী নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। মঙ্গলবার বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিছুর ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মজিবুল ইসলাম চুন্নু, রংপুর সিটি মেয়র ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইয়াসিরসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতা এতে উপস্থিত ছিলেন।
একসময়ে রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়াও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলের মহাসচিব পদ থেকে দীর্ঘদিন দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মসিউর রহমান রাঙ্গা। দল গোছানো থেকে শুরু করে জাপার অবস্থান তৈরিতে তার শক্ত ভূমিকা ছিল। বর্তমানে তিনি রংপুর-১ গংগাচড়া আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন রাঙ্গাকে। তবে কী কারণে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়, তা বলা হয়নি।
জাপার বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, মশিউর রহমান রাঙ্গা দল থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আগে একটি টিভিতে দেয়া সাক্ষাৎকারে দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। ওই মন্তব্য নিয়ে ক্ষুব্ধ হন জি এম কাদের। এরপর থেকেই মসিউর রহমান রাঙ্গা জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সমালোচনা করছেন।
জাপার নেতা-কর্মীরা মনে করেন, রংপুরে প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের বাড়ি হওয়ায় স্বভাবতই এখানে শক্ত অবস্থান জাতীয় পার্টির। আর রংপুর অঞ্চলে জাতীয় পার্টির যে কজন প্রভাবশালী নেতা আছেন, তাদের একজন মসিউর রহমান রাঙ্গা।
রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে রাঙ্গা দলের বাইরে আছেন। দল তো দলের মতোই চলবে। রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি।’
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব মো. নাজিম বলেন, ‘রাঙ্গা বড় ত্যাগী নেতা, দলের জন্য অনেক কাজ করেছেন। তার অনুপস্থিতিতে মৌন প্রভাব তো কিছুটা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকের তো মন খারাপ আছে, তিনি থাকলে আরো বেশে সমাগত হতো, উজ্জীবিত হতেন নেতা-কর্মীরা। উনি তো মহানগরের নেতা ছিলেন না, সে কারণে এই প্রোগ্রামে খুব যে বেশি প্রভাব পড়বে, তা না।’
এ নিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সম্পাদক মিলে ১৮ বছর আছি। এই দল নিয়ে আমার অনেক দরদ আছে। প্রতিটি মানুষের রাজনীতিতে আমার ছোঁয়া আছে। কে কোন পদে যাবে, সেটাও আমি ঠিক করেছিলাম। সম্মেলন আমি একাই করেছি।’
তিনি বলেন, ‘হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের কবর রংপুরে। অথচ আজ (মঙ্গলবার) যে কেন্দ্রীয় নেতারা রংপুরে গেছেন, তারা কেউ তার কবর জিয়ারত করতে যান নাই, এটি দুঃখজনক হলেও সত্য। কিন্তু সম্মেলনে তারা তাদের মনঃপূত লোক রাখার জন্যই গেছেন।’
রাঙ্গা বলেন, ‘আমি যদি রংপুরে থাকতাম, তাহলে আমাদের কর্মীদের বলতাম এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে, যারা এরশাদের মৃত্যু দিবসে আসে না বা যায় না, তারা কীসের জন্য রংপুরে কাউন্সিল করতে যায় না।’
রাঙ্গা বলেন, ‘জাতীয় পার্টিতে সবাই আমার লোক, আত্মীয়-স্বজন, আমার ভাই সবার প্রতি আমার ভালোবাসা আছে। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। ওখানে কোনো কিছু হোক- এটা আমি চাই না, এ জন্য রংপুরে যাই নাই।’