খুলনায় বিএনপির গণসমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য গণতন্ত্রের ভাষা নয়, বরং এটি রাষ্ট্রদ্রোহী বলে দাবি করেছেন জেলার আওয়ামী লীগ নেতারা।
রোববার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তারা। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ।
তিনি বলেন, “সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা যা বলেছেন, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না। আওয়ামী লীগের কোনো চিহ্ন থাকবে না’, এখনও সময় আছে নিরাপদে সরে যান, না হলে পালাবার পথ পাবেন না’, স্বৈচারচারী সরকারকে জনগণ টেনে হিঁচড়ে নামাবে, এ সরকারের পতন ঘটাবে’, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করা হবে’, ‘তাদের আমলে সংখ্যালঘু মানুষ নিরাপদে থাকে’ ইত্যাদি। এসব গণতন্ত্রের ভাষা নয়, রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য বলে আমরা মনে করি।”
বিএনপি কোনো গণতান্ত্রিক দল নয় দাবি করে শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা লাঠিসোটা নিয়ে শহরে প্রবেশ করে আতঙ্ক ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছিল। অথচ বিএনপি নেতারা, পথে পথে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে মিথ্যাচার করেছিল।
‘এ প্রসঙ্গে আমরা বলতে চাই, বিএনপি কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়। তাদের জন্ম সেনানিবাসে। তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ তাদের সমর্থন করে না। বিগত নির্বাচনে তাই জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছিল। ১০টি আসনও পায়নি। তারা গণতন্ত্রের ধার ধারে না। অগণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা দখল করতে চায়।’ আওয়ামী লীগকে টেনে-হিঁচড়ে নামানোর ক্ষমতা বিএনপির দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। ভবিষতেও আসবে। তাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান কিভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, পরবর্তীতে খালেদা জিয়া কিভাবে ক্ষমতায় এসেছে তা জনগণ জানে।
‘যে দলের নেতারা বলেন, পাকিস্তানি আমল ভালো ছিল- সে দলের পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়।’
বিএনপির সমাবেশে কোনো বাধা দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি গত কয়েকদিন যাবৎ খুলনা ও এর আশপাশের অঞ্চলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। জনগণ ছিল উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে। এর মধ্যে ১০ জেলা থেকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এসে এই সমাবেশে যোগ দিয়েছে। পথে কোথাও কোনো বাধা দেয়া হয়নি তাদের।
‘তবে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় তারা নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে এবং সহিংস কার্যকলাপ চালায়। এই সমাবেশের আগে এ অঞ্চলের মালিক-শ্রমিকরা নিরাপত্তার স্বার্থে এবং তাদের কিছু দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিবহন বন্ধ রাখে। এর সঙ্গে সরকার বা আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।’
আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির মিথ্যা অভিযোগ, উসকানি ও নানা উচ্ছৃঙ্খল আচরণের মুখে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ অনেক ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে। তাদের ফাঁদে পা দেয়নি। বিভাগীয় গণসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। বিরোধী পক্ষকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়। অথচ বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হতোই না। এমনকি রাস্তায় নামতে দেয়া হতো না। এর বহু প্রমাণ রয়েছে।’
বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক দল আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘তাদের আমলে সংখ্যালঘু মানুষ কখনও নিরাপদে ছিল না, কখনও থাকবেও না। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শুরু হলে ওই রাতেই বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর।’
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে বিএনপি- এমন দাবি করে শেখ হারুনুর রশিদ বলেন, ‘গণসমাবেশ সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ায়, সোনালী ব্যাংক চত্বর ব্যবহার করার অনুমতি দেয়ায়, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মাইক ব্যবহারসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনুমতি দেয়ায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপি। এতেই প্রমাণিত হয় গণসমাবেশে কোন ধরনের বাধা দেয়া হয়নি। তবে কেন এই মিথ্যাচার করা হলো?’
সামাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার কথা থাকলেও খুলনা আধুনিক রেলওয়ে স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর করে তারা। নগরীর দৌলতপুর এলাকার নতুন রাস্তা মোড়ে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। এতে ২ জন আহত হয়েছে যারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ সময়ে একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা নগরীর শিববাড়ী মোড় টাইগার গার্ডেন হোটেলের সামনে ৪টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। এতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৮ নেতা-কর্মী আহত হয়। দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং দেশকে অশান্ত ও জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তারা এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।’
এ সময়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী ও খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবুসহ জেলা আওয়ামী লীগরে বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী।