বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কৃষি বিভাগের সহায়তা চান পঞ্চগড়ের পান চাষিরা

  •    
  • ২১ অক্টোবর, ২০২২ ০৯:৫৩

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘পঞ্চগড় কৃষি বিভাগে জনবল সংকট। আর যেসব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের কর্মপরিধি বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় কৃষকদের দোরগোড়ায় যেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কৃষকরা মুঠোফোনেও যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ পেতে পারেন। তার পরও খোঁজখবর নিয়ে পান চাষিদের সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

পঞ্চগড়ের নালাগঞ্জ এলাকার চাষি জসিম উদ্দীনের পানের বরজ এক বিঘা জায়গাজুড়ে। ২০ বছরের পুরোনো এই বরজই তার পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস। প্রতি বছর বরজ পরিচর্যার সব খরচ বাদ দিয়েও আয় হতো এক থেকে দেড় লাখ টাকা। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন কমে এসেছে লাভের পরিমাণ। এর বাইরেও কিছু সমস্যার কথা জানালেন তিনি।

জসিম বলেন, ‘পানের বিভিন্ন রোগ-বালাই দেখা দেয়। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করতে না পারায় অনেক সময় কার্যকর বালাইনাশক প্রয়োগ করতে পারি না। এ জন্য আমাদের কৃষি বিভাগের পরামর্শ প্রয়োজন হয়। অথচ কৃষি অফিসের কোনো কর্মকর্তা আমাদের দোরগড়ায় আসেন না।’

তার মতো অনেক চাষির অভিযোগ, পান দীর্ঘমেয়াদি এবং অর্থকরী ফসল হলেও গুরুত্ব পায়নি তেমন। পান চাষের পরিধি বাড়াতে নেই সরকারি উদ্যোগ। বিভিন্ন সমস্যায় কৃষি বিভাগের কোনো সহায়তা ও পরামর্শও পান না তারা। এ ছাড়া উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কমে আসছে লাভের পরিমাণ।’

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় মোট বরজ পানের আবাদ রয়েছে ১৪ হেক্টর জমিতে। এসব পানের আবাদ হয় শুধু সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে।

ভৌগোলিক কারণে এই জেলার মাটি এবং আবহাওয়া দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন। হিমালয়ের কোলঘেঁষে এই জেলার অবস্থান, এতে মাটিতে পাথর এবং বালির আধিক্য বেশি। এতে অর্থকরী ফসল ধান, পাট ও গম আবাদে উৎপাদন খরচ পোষাতে না পেরে চাষিরা এখন পরিবেশ উপযোগী বিভিন্ন আয়বর্ধক ফসল চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে।

সমতলের চা, কমলা, মাল্টা ও আমের আবাদ করে ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়েছেন চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়ার সম্ভাব্যতা যাচাই করে পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা এলাকায় কয়েক বছর ধরে চাষিরা আবাদ করছেন পান। বিশেষ একটি স্বাদ থাকার কারণে দেশের বেশ কিছু স্থানে এই পানের চাহিদা অনেক বেশি। এখানকার উৎপাদিত পান সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

পানের বরজ করে জীবনমান বদলেছে এখানকার পাঁচ শতাধিক চাষির। সম্ভাবনাময় এই দীর্ঘমেয়াদি ফসলটি প্রায় তিন দশক ধরে চাষ হয়ে এলেও তেমন পরিচিতি পায়নি।

সরেজমিনে ইউনিয়নের নালাগঞ্জ, জিন্নাতপাড়া, পাহাড়বাড়ি ও ঘাগড়াপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে ছোট-বড় শত শত বরজ। এসব বরজের ভেতরে চোখ জুড়ানো সারি সারি পানের গাছ যেমন সৌন্দর্যবর্ধন করছে, তেমনি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধি এনেছে চাষিদের।

চাষিরা জানান, এখানকার উৎপাদিত পানের কদর থাকায় বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। এই পান কিনতে সপ্তাহের শুক্র ও মঙ্গলবার ভোরে হাড়িভাসা বাজারে ছুটে আসেন বিভিন্ন জেলার পাইকাররা।

রমজান আলী নামে এক পান চাষি বলেন, ‘পান লাভজনক আবাদ। তবে আমাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। আমাদের উৎপাদিত পান দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হলেও পঞ্চগড় জেলা শহরে আমরা পান বিক্রি করতে পারি না। এখানকার স্থানীয় বাজার দখল করেছে রাজশাহী অঞ্চলের পান। আমদানি নির্ভরতা কমানো গেলে পানের সম্ভাবনা আরও বাড়বে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের নেক দৃষ্টি কামনা করছি।’

জাকির হোসেন বলেন, ‘এখানে পান চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বরজ করার শুরুটা ব্যয়বহুল। ফলে অনেকের আগ্রহ থাকলেও পান চাষ করতে পারছেন না। যদি আগ্রহী চাষিরা সরকারি সহযোগিতা পায় তাহলে এখানে চাষের পরিমাণ বাড়বে এবং অর্থনৈতিকভাবেও সমৃদ্ধি আনবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দীন বলেন, ‘পঞ্চগড় কৃষি বিভাগে জনবল সংকট। আর যেসব উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন, তাদের কর্মপরিধি বেড়ে যাওয়ায় অনেক সময় কৃষকদের দোরগোড়ায় যেতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে কৃষকরা মুঠোফোনেও যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ পেতে পারেন। তার পরও খোঁজখবর নিয়ে পান চাষিদের সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর