রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে শিক্ষার্থীদের হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালে নিজেদের নিরাপত্তা ও বুধবার রাতে হাসপাতালে হামলায় জড়িত রাবি ছাত্রদের শাস্তির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছেন ইন্টার্নরা। এতে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা, দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা।
এর আগে হামলার ঘটনার পর বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে রাত ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন ইন্টার্নরা।
ইন্টার্নদের কর্মবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সব বিভাগীয় প্রধান ও ইউনিট প্রধানদের নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছি।’
হামলার প্রতিবাদে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দুটি দাবি জানিয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘হামলার ঘটনায় দোষীদের শাস্তি এবং নিরাপদ চিকিৎসা দেয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’
হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, ‘ইন্টার্নরা না থাকলেও চিকিৎসক ও সিনিয়র চিকিৎসকদের মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। আমাদের ওয়ার্ডগুলোতে প্রচুর রোগী আছে। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ছাড়া আমরা চিন্তাও করতি পারি না। রাবির ওই ছাত্রকে তারা তো প্রপার চিকিৎসা দিয়েছে। এটা রাবির ছাত্র উপদেষ্টা এবং প্রক্টরও কাল রাতের মিটিংয়ে স্বীকার করেছেন।
‘আপনারা জানেন, যেখানে ওই ছাত্র পড়েছিল, সেখানেই তার মাথার মগজ বের হয়েছিল। এখন মগজ বের হলে তো কিছু করার থাকে না। এদিকে ছাত্রদের যে ক্ষোভ সেটি হাসপাতালের ওপরে কেন?’
কর্মবিরতিতে যাওয়া ইন্টার্নদের কাজে ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘রাবির ছাত্ররা শুধু আন্দোলনই করেনি। তারা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে ডাক্তারদের খুঁজে বের করেছে। এতে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা পালিয়ে যায়। রামেকে ২৮০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক আছে। তারা এখন নেই। তাহলেই বুঝতে পারেন কী আবস্থা হচ্ছে। তারা আমাদের ব্যাকবোন। এখন আমাদের সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়েই চিকিৎসা চলছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের সঙ্গে কথা বলে কাজে ফিরিয়ে আনার।’
বুধবার রাত ৮টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাহরিয়ার। উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। জরুরি বিভাগ থেকে তাকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নেয়া হয়। কিছুক্ষণ পরই সেখানে শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
এ ঘটনায় চিকিৎসার অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় লাঞ্ছিত হন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক।
হলের আবাসিক ছাত্র মো. রাশেদুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে অনেক জোরে শব্দ হলে এসে দেখি একজন ওপর থেকে পড়ে গেছে। এরপর আরও কয়েকজন মিলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
ঘটনার পর হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে আনার পর ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা দেয়া হলেও তার মৃত্যু হয়। তার সহপাঠীদের অভিযোগ, তার চিকিৎসা ঠিকভাবে হয়নি। এরই প্রতিবাদে তারা হাসপাতালে ভাঙচুর শুরু করে।’হাসপাতালে ভাঙচুর ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের লাঞ্ছিতের খবর ছড়িয়ে পড়লে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও ইন্টার্নরাও হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। হাসপাতাল পরিচালকের দপ্তরের সামনে দুই পক্ষের অবস্থানে এ সময় হাসপাতালজুড়েও চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাত ১২টার দিকে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বৈঠক শেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ নওশাদ আলীকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তদন্ত কমিটি গঠন ও দোষীদের শাস্তির আশ্বাসে মধ্যরাতে হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।