জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন-সমর্থিত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হওয়ার পর ঈর্ষান্বিত হয়ে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহর সমর্থকরা, এমন অভিযোগ উঠেছে।
১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. ফারুক হোসেন পরাজিত হন নিক্সন চৌধুরী-সমর্থিত শাহাদাত হোসেনের কাছে।
নিক্সন-সমর্থিত প্রার্থীর কাছে পরাজয়ের পর প্রতিহিংসার কারণে জেলা পর্যায় থেকে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে নিক্সনের সমর্থকদের বাদ দিয়ে জাফর উল্যাহর সহযোগীদের নাম দেয়া হয়।
পরের দিন মঙ্গলবার দুপুরের দিকে জেলা আওয়ামী লীগের অনুমতিক্রমে নতুন কমিটির নেতৃত্বে চরভদ্রাসন কার্যালয়ের তালা ভেঙে নিয়ন্ত্রণ নেন জাফর উল্যাহর সমর্থকেরা।
বিকেল ৫টার দিকে ওই কার্যালয়ে কেক কেটে শেখ রাসেলের জন্মদিন উদ্যাপন করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শেখ ইসাহাক মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মোশাররফ হোসেন, আহসানুল হক মামুন ও বেলায়েত হোসেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি চরভদ্রাসন পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত। ২০১২ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. কাউসার ৫ শতাংশ জমি কার্যালয়ের নামে দলিল করে দেন। পরে ওই জমিতে দোতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
২০১৪ সালে ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নেতা মজিবর রহমান চৌধুরী নিক্সন। পরে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ পান।
এই সংসদীয় এলাকার অন্য দুটি উপজেলার মতো চরভদ্রাসনেও দল দুই ভাগে (মজিবর রহমানপন্থি ও কাজী জাফর উল্যাহপন্থি) বিভক্ত।
২০২০ সালের নভেম্বরে উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মো. কাউসার চলে যান মজিবর রহমানের পক্ষে। এরপর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় মজিবর রহমানপন্থিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দুই বছর পর ফের এই কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন জাফর উল্যাহর সমর্থক নেতা-কর্মীরা।
গত ৩০ মার্চ চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটি বিলুপ্ত করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ, যার নিয়ন্ত্রণ জাফর উল্যাহর হাতে। ওই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আহসানুল হক মামুন কার্যালয়ে প্রবেশের সময় উপস্থিত ছিলেন।
মামুন বলেন, ‘কাউসার বহু দিন ধরে আওয়ামী লীগে নেই। তিনি কার্যালয়টি জবরদখল করে রেখেছিলেন। আমরা ভবনটি দখলমুক্ত করার জন্য জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের চিঠি দিই। এরপর জেলা আওয়ামী লীগ থেকে জানায়, দলের সব কার্যক্রম দলীয় কার্যালয়ে করতে হবে। সেই অনুযায়ী আমরা ওই ভবনে ঢুকে শেখ রাসেলের জন্মদিনের কর্মসূচি উদ্যাপন করেছি। ভবনটি আমাদের নিজেদের হেফাজতে নিয়েছি।’
জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কাউসার বলেন, ‘এটি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়। সভাপতি বা সম্পাদকের কার্যালয় নয়। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের যে কেউ ওই অফিস ব্যবহার করতে পারেন। এটিতে দখল বা পাল্টাদখলের কোনো বিষয় নেই।'
নিজেকে এখনো উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করে কাউসার বলেন, ‘আমাদের কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে বা আমাদের বাদ দেয়া হয়েছে, এ-জাতীয় কোনো চিঠি আমরা কেন্দ্র থেকে পাইনি। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট যে আহ্বায়ক কমিটির কথা বলা হচ্ছে, তা কখন, কোথায়, কীভাবে গঠিত হয়েছে তা-ও আমার জানা নেই।’