মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ তিন দিনে ৬৮৫ জনকে শুনানির আওতায় নিয়ে বন্ধ হওয়া গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনের ‘ব্যাপক অনিয়ম’খতিয়ে দেখতে দ্বিতীয় দিনের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি এ কার্যক্রম শুরু করেছে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে ইসির অতিরিক্ত সচিব ও গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্বে এ শুনানি চলছে।
এতে কমিটির সদস্যসচিব ও ইসির যুগ্ম সচিব মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এবং যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে ৫২২ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের শুনানি হবে। তার মধ্যে ৪০ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রজিাইডিং কর্মকর্তা, ২০০ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষে), সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আরও অনেকেই রয়েছেন।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাকক্ষে দ্বিতীয় দিনের তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
এর আর মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে প্রথম দিনের তদন্ত কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ১১ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৬৬ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ৫৫ জন পোলিং এজেন্ট (প্রত্যেক প্রার্থীর পক্ষ থেকে), গাইবান্ধা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ১৩৬ জন পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
শুনানিতে অংশ নেয়া মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের অনেকেই ভোটের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করেছেন। আবার অনেকেই পাল্টা অভিযোগও করেছেন তদন্ত কমিটির কাছে। অনেকে সুষ্ঠু ভোটের দাবি করলেও কেউ কেউ ভোটের দিন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ভয়ে নিরুপায়ও ছিলেন বলে তদন্তে জানিয়েছেন।
তবে পোলিং এজেন্টের অধিকাংশরাই নিজ নিজ প্রার্থীর পক্ষে সাফাই করেন।
মঙ্গলবার প্রথম দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি প্রধান অশোক কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম দিনের তদন্তে ১৩৬ জনের উপস্থিতি ছিল। প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের মৌখিক ও লিখিত বক্তব্য নেয়া হয়েছে।’
তিন দিনের তদন্ত কার্যক্রম শেষে নির্বাচন কমিশনে আমরা প্রতিবেদন দাখিল করার কথা জানান তিনি।
ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচন ভোট বন্ধ করে দেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
ঢাকার নির্বাচন ভবনে বসে সিসিটিভি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ করে একে একে ৫১টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে ইসি। পরে ভোট স্থগিত করে দেয় ইসি।
এমন অবস্থায় ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে এই শুনানির জন্য আদেশ জারি করে ইসির গঠিত তদন্ত কমিটি। মাঠ প্রশাসন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাসহ অনেকেই রয়েছেন এই শুনানির তালিকায়।
তদন্ত কার্যক্রমের শেষ দিন অর্থ্যাৎ বৃহস্পতিবার গাইবান্ধা সার্কিট হাউজে পাঁচ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ১৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি ও র্যাবের কমান্ডিং অফিসার দুইজন, রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকসহ ২৭ জনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
গত জুলাইয়ে জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই উপ-নির্বাচনের শেষ করা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। উপনির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল।
সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার সাতটিসহ ১৭টি ইউনিয়নে ভোটার রয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ১৬০।