বিচারপ্রক্রিয়ার দাপ্তরিক জটিলতায় হাজতখানা ও এজলাসের কাঠগড়ায় দীর্ঘ সময় কাটাতে হয় আসামিদের। এই সময়টুকু তাদের কাটে হতাশা, দুশ্চিন্তা আর দুর্ভোগে। তাদের সময় কাটানোর জন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান।
তিনি আদালতের হাজতখানা ও তার এজলাসে আসামির কাঠগড়ার পাশে দুটি মিনি পাঠাগার স্থাপন করেছেন। সেখানে বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের বইয়ের পাশাপাশি রাজনীতিবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বইপত্রও রাখা হয়েছে।
ছোট্ট এই পাঠাগারের নামের সঙ্গে লেখা রয়েছে ‘বই দুশ্চিন্তাময় একাকী জীবনের একমাত্র বন্ধু, যা মানুষকে আলোকিত জীবনে ফিরিয়ে দেয়।’
আসামিরা হাজতে বা কাঠগড়ায় বসে বই পড়ে সময় কাটাতে পারছেন। এতে দুশ্চিন্তা এড়ানোর পাশাপাশি বই পড়ে আলোকিত হচ্ছেন তারা। এর আগেও এই বিচারক শীতে আসামিদের কষ্ট লাঘবের জন্য কাঠগড়ায় কার্পেটের ব্যবস্থা করে দেন। আদালতে বিচারকাজের জন্য আসা নারীদের সঙ্গে শিশুদের তিনি চকলেটের ব্যবস্থাও রেখেছেন।
পঞ্চগড় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘দৃষ্টিভঙ্গি পরির্বতন করে মানুষ মানুষের জন্যে এগিয়ে এলে সমাজ থেকে সকল বৈষম্য দূর হতে পারে। অপরাধীদের ধিক্কার নয়, তাদের পাশে এসে তাদের সঙ্গে থেকে ভালো কিছু দিতে পারলেই অপরাধ কমে যাবে। বিচারকের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।’
সামসুল আলম নামের এক হাজতি বলেন, ‘আদালতে বিচারকাজ শেষ হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় আমাদের হাজতে থাকতে হয়। এই সময়টুকু কোনোভাবেই কাটতে চায় না। একদিকে পারিবারিক চিন্তা আর অন্যদিকে সময়ের ভোগান্তি। পাঠাগার হওয়ায় আমাদের সময় কাটানোর একটি ভালো মাধ্যম হলো। বিচারের আগে হাজতিদের জন্য এটি সম্মানজনক বিষয়।’
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চ সহকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আদালতে বিচারকাজসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজে আসামিদের বিকেল পর্যন্ত হাজতখানায় থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময়ে তারা দুশ্চিন্তায় থাকে, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাই অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান তাদের সময় কাটানোর জন্য ছোট পরিসরে আদালতে পাঠাগার স্থাপন করেছেন। এখানে বিভিন্ন ধরনের বই রাখা আছে। গল্প, উপন্যাস, ধর্মীয় বই, জীবনী সাহিত্য ও আইনবিষয়ক বই। বই পড়ে তারা একদিকে যেমন সময় পার করতে পারছেন, অন্যদিকে বই পড়ে আলোকিত হচ্ছেন। আইনবিষয়ক বই পড়ে আইনের বিভিন্ন বিষয় জানতে পারছেন।’