বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্টের (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খানকে একবার জাপানিজরা কুমিল্লা যাওয়ার পথ জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে আখতার হামিদ খান বলেছিলেন, দাউদকান্দি ব্রিজ পার হলে ফসলের মাঠই বলে দেবে কুমিল্লার কোথায় শুরু, কোথায় শেষ।
সেই প্রবাদবাক্য যেন যুগ যুগ ধরে প্রমাণ করে যাচ্ছেন কুমিল্লার কৃষকরা। বছরজুড়ে মাঠে থেকে কৃষকরা ফসল ফলিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশসহ পুরো কুমিল্লা জেলায় চোখ-জুড়ানো সবুজ আর সবুজ।
চলতি বছর মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন চাষ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন কৃষকরা। ধানের চারার বয়স বেশি হলে ফসল উৎপাদন কম হয়। আশঙ্কা দেখা দেয় রোপা আমন আবাদে। তাই বোরো মৌসুমে সেচপাম্প চালিয়ে কুমিল্লার মাঠে রোপা আমনে সবুজের ঢেউ তুলেছেন কৃষকরা। কুমিল্লার এক লাখ ১৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে এখন রোপা আমনের মাঠে সবুজ হাসি দেখা যাচ্ছে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা কাকিয়ার চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে দোল খাচ্ছে সবুজ ফসল। কেউ জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউ পোকা দমনের চেষ্টা করছেন।
কাকিয়ার চর এলাকার কৃষক মো. হারুন মিয়াসহ কয়েকজন জানান, এবার রোপা আমন ধানের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এই মৌসুমে এত কম বৃষ্টি আর হয়নি। রোপা আমন ধান চাষ নিয়ে তারা বেকায়দায় পড়েন। পরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের অনুরোধে সেচপাম্প মালিকরা পাম্প চালু করেন। তারা পানি দেয়ার পর রোপা আমন ধানের চারা লাগান কৃষকরা। এবারই প্রথম সেচ দিয়ে রোপা আমন ধান চাষ করতে হলো তাদের।
পাম্পচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমরা ২০ বছর ধরে সেচপাম্প চালাই। সাধারণত বোরো মৌসুমে পাম্প চালাই। এবার বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষি অফিসের পরামর্শে ২৫০ একর জমিতে সেচ দেই।’
নিমসার ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ ভুইয়া বলেন, ‘এবার খরার কারণে রোপা আমন লাগানো যাচ্ছিল না। তাই কৃষকদের তাগিদ দিয়ে পাম্পচালকদের উদ্বুদ্ধ করে ধান লাগানো হয়। সময়মতো আবাদ হওয়ায় ধানের ভালো ফলন পাওয়া যাবে, সঙ্গে তারা পরবর্তী ফসল সময়মতো লাগাতে পারবেন।’
বুড়িচং উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ বানিন রায় বলেন, ‘বুড়িচং উপজেলায় এ বছর রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমি। আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাসে ৭২ ও ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দেরিতে ধান রোপণ করা হলে ফসল কমে যায়। তাই উপপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনায় ভাদ্র মাসে আমরা মাঠ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ৫৩৫টি সেচপাম্প চালানোর ব্যবস্থা করি। এতে আমরা শতভাগের বেশি জমিতে রোপা আমন ধান লাগাতে সক্ষম হই।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘কুমিল্লায় বর্ষাকালে এবার ৪২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে। এতে বৃষ্টিনির্ভর আমন চাষ করা যাচ্ছিল না। এবার রোপা আমন আবাদে আমাদের বড় ধরনের সংগ্রাম করতে হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে প্রশাসন, পাম্প মালিক, কৃষক ও কৃষির মাঠ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সেচযন্ত্র চালুর ব্যবস্থা করেছি। এতে আমাদের রোপা আমন আবাদে ব্যাঘাত ঘটেনি। এখন মাঠে ফসলের অবস্থা ভালো। আমাদের জেলায় এবার চাষের লক্ষ্য ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৩৫ হেক্টর জমিতে। এই লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন করেছি।’