প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে ভারত থেকে বরিশালে এসে তিনদিন পর মারা গেছেন জাভেদ খান নামে এক যুবক। প্রেমিকার সঙ্গে বরিশাল নগরীর একটি হোটেলে উঠেছিলেন তিনি। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ঢাকা নেয়ার পথে মঙ্গলবার ভোররাতে তার মৃত্যু হয়।
এর আগে ‘প্রেমের টানে’ বরিশালে এসে পিটুনি খেয়েছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ভারতের তামিল যুবক প্রেমকান্ত। ঘটনাটি বেশ আলোচিত হয়েছিল। থানা পুলিশ হেফাজতেও থাকতে হয়েছিল তাকে। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকাকে না পেয়ে ফিরে গিয়েছিলেন তিনি।
ভারতীয় জাভেদ খানের মৃত্যুর বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
তিনি জানান, ২৯ বছরের জাভেদের বাড়ি ভারতের উত্তর প্রদেশের হাসানপুরে। তিনি গত ৯ অক্টোবর সকালে ভারত থেকে বরিশালে এসে পৌঁছান। নগরীর কাঠপট্টি এলাকায় হোটেল এথেনায় রুম ভাড়া নেন।
সাইফুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রেমিকাকে নিয়ে ওই হোটেলে ওঠেন জাভেদ। তারপর তারা ঘোরাঘুরিও করেছিলেন। এক পর্যায়ে তার বুকে পেইন হচ্ছিল। তিনি সদর হাসপাতালে যান, সেখানে কিছু টেস্ট করিয়ে আবার হোটেলে যান। পরদিন আবার পেইন হলে তিনি সাউথ অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ডাক্তার দেখান।
‘সেখানের ডাক্তার তার রিপোর্ট দেখে দ্রুত বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য বলেন। বুধবার রাত ২টার দিকে জাভেদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে ভোররাত ৪টার দিকে তিনি মারা যান।’
ঘটনার বর্ণনায় জাভেদের প্রেমিকা বরিশাল নগরীর ভাটিখানা এলাকার তরুণী বলেন, ‘জাভেদ আমার বয়ফ্রেন্ড। হঠাৎ করে বুকে ব্যথা উঠে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১০ অক্টোবর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। এরপর ১২ অক্টোবর ভোররাতে চিকিৎসকদের পরামর্শে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেয়ার প্রস্তুতি নিলে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠানোর পরেই মারা যায় সে।
‘জাভেদ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার পরিবারকে জানিয়েছি, মৃত্যুর পরও ভোর পৌনে ৫টার দিকে তাদের জানিয়েছি।’
হোটেল অ্যাথেনার রিসিপশনিস্ট মো. সাব্বির নিউজবাংলাকে জানান, গত রোববার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে জাবেদ হোটেলে গিয়ে ৪১০ নাম্বার রুম ভাড়া নেন। তার সঙ্গে বন্ধু পরিচয়ে একজন মেয়ে দেখা করতে আসেন এবং কিছু সময় রুমে থাকেন। পরদিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ রুমটি ছেড়ে দেন এবং রিসিপশনে জাভেদ তার ব্যাগ রেখে যান- পরে নিয়ে যাবেন বলে। মঙ্গলবার ওই তরুণী এসে ব্যাগ নিয়ে যান। বুধবার সকালে পুলিশের মাধ্যমে হোটেল কর্তৃপক্ষ জাভেদের মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে।
কী কারণে জাভেদের মৃত্যু হয়েছে- জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রিফায়তুল হায়দার বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিছু লেখা ছিল। তিনি কিছু রোগে ভুগছিলেন।’
পুলিশ কমিশনার সাইফুল বলেন, ‘চিকিৎসকরা একটি বোর্ড তৈরি করেছে। জাভেদ খানের বুকে অনেক সমস্যা রয়েছে। কিডনিতেও সমস্যা রয়েছে। তার লিভারেও অনেক সমস্যা ছিল। ভারতেও তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। সেখানকার ডাক্তাররা তাকে কিছু কিছু জিনিস অর্থাৎ অ্যালকোহোল জাতীয় জিনিস খেতে নিষেধ করেছিলেন।
‘আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে এটা পাচ্ছি। লাশ হস্তান্তরের বিষয়টি পুরো ভারতীয় দূতাবাসের। তারা যেভাবে বলবে সেভাবেই লাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জাভেদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা। তাদের কোনো অভিযোগ পাইনি। পুরো বিষয়টি তদন্ত চলছে।’
প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে জাভেদ ২০১৮ সালে আরেকবার বরিশাল এসেছিলেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
যা ঘটেছিল প্রেমকান্তের সঙ্গে
প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গত ২৪ জুলাই ভারত থেকে বরিশাল এসেছিলেন তামিল নৃত্যশিল্পী প্রেমকান্ত। তিনি দাবি করেছিলেন, সরকারি বরিশাল মহিলা কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক হয়। মেয়েটির বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলায়।
প্রেমকান্ত জানান, তিন বছর প্রেমের পর তরুণীর সঙ্গে দেখা করতে তিনি বরিশাল আসেন। পরদিন দুপুরে সরকারি মহিলা কলেজে দুজনের দেখাও হয়। দুপুরে তারা শহরের হান্ডি কড়াইয়ে একসঙ্গে খাবার খান। বিকেলে ঘুরে বেড়ান।
পরদিন চয়ন হালদার নামে এক যুবক দাবি করেন, তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে ওই তরুণীর। চয়ন ২৭ জুলাই নগরীর কাশিপুর চৌমাথা এলাকায় পিটুনি দেন প্রেমকান্তকে।
প্রেমকান্তের অভিযোগ, শুধু পিটুনি নয়, তার কাছ থেকে টাকা-পয়সাও ছিনিয়ে নেয়া হয়। আর এ ঘটনার পর প্রেমিকা ও তার পরিবারের সঙ্গেও তিনি যোগাযোগ করতে পারেননি।
- আরও পড়ুন: ‘ভালো থেকো বরগুনা, ভালো থেকো বাংলাদেশ’
ভাঙা হৃদয় নিয়ে তামিল যুবক অভিযোগ দিতে গিয়েছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটনের এয়ারপোর্ট থানায়। সেখানে উল্টো তিন দিন তাকে পুলিশের হেফাজতে থাকতে হয়েছে। তার অভিযোগ, সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ, বরং তাকেই হয়রানি করা হচ্ছে।
এরপর প্রেমকান্ত যান বরগুনায়। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে প্রেমকান্তের বিরুদ্ধে তালতলী থানায় সেই ছাত্রীর বাবা লিখিত অভিযোগ দিলে।
তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু জানান, অভিযোগে মেয়েটির বাবা বলেছেন, ভারত থেকে আসা ওই যুবক মিথ্যাচার করে তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন মেয়েটিও। এমনকি মেয়েটি দাবি করেন, প্রেমকান্তের সঙ্গে তিনি দেখাও করেননি।
গত ৬ আগস্ট বরগুনা ছাড়েন প্রেমকান্ত। সেদিন জেলার খাজুরতলা বাস টার্মিনাল থেকে বাসে বরিশালের উদ্দেশে রওনা করেছেন তিনি। গাড়ি ছাড়ার আগে উৎসুক মানুষের উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ভালো থেকো বরগুনা, ভালো থেকো বাংলাদেশ।’
ঢাকায় কিছুদিন থেকে গত ১৫ আগস্ট দেশে ফিরে যান প্রেমকান্ত।