রংপুরের পীরগঞ্জে ইটভাটায় বজ্রপাতে নিহত পাঁচজনেরই বাড়ি পাশের জেলা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নে। একসঙ্গে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পুরো ইউনিয়নজুড়েই এখন শোকের মাতম। স্বজন হারিয়ে বাকরুদ্ধ পরিবারের সদস্যরা।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী চক শোলাগাড়ি বিটিসি মোড় এলাকার বিইবি ইটভাটায় ওই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পরপরই নিহতদের মরহেদ স্বজনরা বাড়িতে নিয়ে যান। নিহত সবাই ইটভাটায় ইট টানা শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তাদের রোজগারেই চলতো সংসার।
নিহতরা হলেন- কাবিলপুর সোনাতলা গ্রামের আব্দুল জলিল মিয়া, তিলকপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলাম, চকনদী গ্রামের সিয়াম মিয়া, একই গ্রামের শাহাদাত মিয়া ও রাশেদুল ইসলাম।
নিহত নাজমুলের বাবা বৃদ্ধ বাদশা মিয়া চলাফেরা করতে পারেন না। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে আতোয়ার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। ছোট ছেলে নাজমুল ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বিকেলে হঠাৎ বজ্রপাতে প্রাণ হারান তিনি।
অকালে ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা বাদশা মিয়া বলেন, ‘আল্লায় হামাক কেনে তুলে নিলি নে। ছোলটেক অল্প বয়সে নিয়ে গেলু…।’
বজ্রপাতের ঘটনায় মারা যাওয়া রাশেদুল ইসলামও ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। স্ত্রী মনোয়ারা বেগম ও দুই শিশু সন্তান রেখে গেছেন তিনি।
মনোয়ারা আহাজারি করে বলেন, ‘স্বামী তো চলেই গেল। এখন এই বাচ্চা ছোল দুটেক কেমনে মানুষ করবো। এক ছটাকও জায়গা জমিও নাই।’
মৃত শাহাদত মিয়ার বাবা আল আমিন বিলাপের সুরে বলেন, ‘হামরা তো গরীব মানুষ। ছোলটাই কামাই করি দেয়। তাকে তো হারানো। আল্লায় হামাক দেখল না।’
তিলকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুম মিয়া ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘যারা আজ মারা গেল; তারা সবাই হতদরিদ্র। এদের উপার্জনেই পরিবার চলতো। প্রত্যেক পরিবারকে সরকারিভাবে সাহায্য করা উচিত।’
কাবিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যাই। স্বজনরা কাঁদকে কাঁদতে তাদের লাশ নিয়ে গেছেন। ঘটনাটি আমার ইউনিয়নের হলেও যারা মারা গেছেন তাদের সবার বাড়ি পাশের উপজেলা সাদুল্লাপুরে। আমি সাথে সাথেই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের জানিয়েছি।’
এদিকে, সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগম জানান, ‘এ ঘটনার সংবাদ আমরা পেয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। মৃতদের দাফন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মৃত পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে সহযাগিতা করা হবে।’