আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে চলবে বলে দলটির নেতা আমানউল্লাহ আমান যে বক্তব্য রেখেছেন, তা শুনে সরকার ভয় পেয়েছে বলে মনে করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমান উল্লাহ আমানের এই এক বক্তব্যে আপনারা সবাই ভয় পেয়ে গেছেন। ভয়ের কিছু নেই, আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। দ্রুত সেফ এক্সিট নিন, সংসদ ভেঙে দিন, নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নয়ত পালাবার পথ পাবেন না। কারণ, মানুষ জেগে উঠেছে।’
সোমবার দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফখরুল।
১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিতে নিহত ছাত্রদল নেতা নাজিরউদ্দিন জেহাদের স্মরণে ‘শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদ’ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
এই স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন আমান নিজেও। তার সেই ১০ ডিসেম্বরের বক্তব্য নিয়ে কিছুটা পিছুহটে বলেন, ‘১০ তারিখ নয়। যখনি এই সরকার অবৈধভাবে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে, তখন থেকে দেশের জনগণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল চায়নি যে এই সরকার ক্ষমতায় থাকুক। জনগণ এই সরকারকে আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাদের দাবি অনুযায়ী আমরাও মাঠে নেমেছি।’
গত শনিবার জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের এক আলোচনায় আমান বলেছিলেন, ‘এই বাংলাদেশ চলবে না, এই বাংলাদেশ চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে চলবে খালেদা জিয়ার কথায় ও দেশনায়ক তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কোনো দেশ চলবে না কারও কথায়।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে উত্তর থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অচল করে দিতে কর্মসূচি আসছে জানিয়ে বিএনপি নেতা সেই কর্মসূচি সফল করতে প্রাণ দিতে প্রস্তুত হতেও বলেন।
আমান সেদিন বলেন, ‘আপনারা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে আল্লাহর নামে শহীদ হওয়ার প্রস্ততি নিন, প্রয়োজনে শহীদ হব, এই বাংলাদেশে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।’
ফখরুল কথা বলেন এরশাদ পতনের আন্দোলন নিয়ে। বলেন, নব্বইয়ের ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছিল একটা ঐক্যবদ্ধ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে।
সে সময়ের মতো এবারও জাতীয় ঐক্যের তাগিদ দিয়ে বিএনপি নেতা বলেন, ‘তখনও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আলাদা আলাদা জোট ছিল। বিএনপির আলাদা জোট ছিল, আওয়ামী লীগের আলাদা জোট ছিল, বামপন্থিদেরও আলাদা জোট ছিল। সেই জোটগুলো একটা জায়গায় এসে যুগপৎ আন্দোলন হয়েছিল এবং যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই স্বৈরাচারের পতন হয়েছিল।
‘আজকেও সেই প্রেক্ষিত উপস্থিত। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এজন্য সব রাজনৈতিক দলকে এক জায়গায় আনতে হবে। ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করার প্রয়োজন হবে। জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ গঠনের প্রয়োজন হবে। যুগপৎ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধার ও বাংলাদেশকে মুক্ত করার’ আন্দোলন শুরু হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের ৫ জন প্রাণ দিয়েছে। হাজার প্রাণ দিতে হলেও দেব। তবু অবশ্যই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করব।’
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকনের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, হাবিবুর রহমান হাবিব, আসাদুজ্জামান রিপন, নাজিম উদ্দিন আলম, খন্দকার লুৎফর রহমান, সাইফুদ্দিন মনি, আসাদুর রহমান খান, কামরুজ্জামান রতন, মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ওলামা দলের মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হক, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল।