আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশ চলবে বলে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমান যে বক্তব্য রেখেছেন তাকে ‘উল্টাপাল্টা বক্তব্য’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। বলেছেন, এই ধরনের উল্টাপাল্টা বক্তব্যে বিএনপি নেত্রীকে আবার জেলে যেতে হতে পারে।
সচিবালয়ে সোমবার এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
দুই দিন আগে আমান যে বক্তব্য রাখেন তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ‘আমান সাহেবরা যদি এমন উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখতে থাকেন তাহলে সরকারকে ভাবতে হবে প্রধানমন্ত্রী যে কৃপা বা বদান্যতা দেখিয়েছেন সেটি আদৌ দেখানো প্রয়োজন কি না, নাকি তাকে কারাগারে পাঠাতে হবে।’
গত শনিবার বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক আলোচনায় আমান বলেন, ‘এই বাংলাদেশ চলবে না, এই বাংলাদেশ চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে চলবে বেগম খালেদা জিয়ার কথায় ও দেশনায়ক তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কোনো দেশ চলবে না কারও কথায়।’
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে উত্তর থেকে দক্ষিণ ও পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত অচল করে দিতে কর্মসূচি আসছে জানিয়ে বিএনপি নেতা সেই কর্মসূচি সফল করতে প্রাণ দিতে প্রস্তুত হতেও বলেন।
আমান সেদিন বলেন, ‘আপনারা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে আল্লাহর নামে শহীদ হওয়ার প্রস্ততি নিন, প্রয়োজনে শহীদ হব, এই বাংলাদেশে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমান উল্লাহ আমান সাহেব সম্ভবত স্বপ্ন দেখেছেন। উনি হয়ত এ ধরনের কিছু একটা স্বপ্নে দেখেছেন, তখন উনি বলে ফেলেছেন। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃপায়, বদান্যতায় কারাগারের বাইরে আছেন।’
সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত বেগম খালেদা জিয়া ২০২০ সালর ২৫ মার্চ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক উদ্যোগে।
সরকার প্রধান তার নির্বাহী আদেশে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর এই সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও পাঁচ বার। আগামী ২৫ মার্চ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আছে।
তথ্যমন্ত্রী কথা বলেন মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালকে আক্রমণ করে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর একটি বক্তব্য নিয়ে।
বিএনপি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে গুমের অভিযোগ আছে, সেই প্রসঙ্গে তুলতানা কামাল ভারতীয় একটি গণমাধ্যমকে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, গুমের বিষয়ে জাতিসংঘের যে কোনো একটি সূত্র থেকে তথ্য নেয়া উচিত।
এই বক্তব্যের পর সুলতানা কামালকে আওয়ামী মানবাধিকার কর্মী বলে কটাক্ষ করেন রিজভী। তার সমালোচনাও করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সুলতানা কামাল একজন মানবাধিকার কর্মী ও দেশের একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী। তার অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমি নিজেও একমত নই। তার বেশিরভাগ বক্তব্যই সরকারের বিরুদ্ধে। তাই বলে তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে কথা বলে সেটা স্বাধীনতা বিবর্জিত।
‘যারা এ ধরনের মানবাধিকার ও সমালোচক তারা নিজেদের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়গুলো দেখে। তাদের সেই বক্তব্যের সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণ সেটা হওয়া উচিত নয়।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যেভাবে রিজভী আহমেদ তার (সুলতানা কামাল) ব্যাপারে বক্তব্য রেখেছেন, যেভাবে তাকে আওয়ামী লীগের দালাল বলেছেন। কখন রিজভী আহমেদ মির্জা ফখরুল সাহবকে বলে বসেন উনিও আওয়ামী লীগের দালাল, সেই শঙ্কার মধ্যে আছি।’
‘একজন রিজভী আহমেদ থাকলে বিএনপির আর কিছু লাগে না। আমি মনে করি তার এই বক্তব্যটা স্বাধীনতা এবং শিষ্টাচার বহির্ভূত হয়েছে’-বলেন তথ্যমন্ত্রী।