টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত গোটা বাংলাদেশ অচল করে দিতে কর্মসূচি আসছে জানিয়ে নিশ্চিন্তে শহীদ হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান। বলেছেন, শহীদ হয়ে হলেও এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেবেন না তারা।
আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের নির্দেশে চলবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনায় তিনি এ কথা জানান।
বর্তমান সরকার ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে এবং গণতন্ত্র হরণ করেছে অভিযোগ করে বিএনপি নেতা বলেন, তারা সব দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে যাচ্ছেন।
নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচি আসছে জানিয়ে নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বানও জানান আমান। বলেন, ‘আপনারা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে আল্লাহর নামে শহীদ হওয়ার প্রস্ততি নিন, প্রয়োজনে শহীদ হব, এই বাংলাদেশে হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভায়েরা প্রস্তুতি নিন, ওই কাঁচপুর ব্রিজ, ওই টঙ্গী ব্রিজ, এই দিকে মাওয়া রোড, ওই দিকে আরিচা রোড, সারা বাংলাদেশ, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া কর্মসূচি আসছে। সারা বাংলাদেশ বন্ধ করে দেবো।
‘এই বাংলাদেশ চলবে না, এই বাংলাদেশ চলবে আগামী ১০ ডিসেম্বরের পরে চলবে বেগম খালেদা জিয়ার কথায় ও দেশনায়ক তারেক রহমানের কথায়। এর বাইরে কোনো দেশ চলবে না কারও কথায়।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলে নির্বাচিত সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনে জাতীয় সংসদ। এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি ও তার জোটের শরিকরা। তবে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে যোগ দেয় তারা। সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে এবার আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে তারা। দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দিচ্ছে তারা।
আমান বলেন, ‘এই সরকারকে যদি ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন হয় তাহলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে; এবং আগের রাতে ভোট হবে, ভোট চুরি করবে এবং ভোটের দিন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীদলীয় যে এজেন্ট আছে তাদেরকে বের করে দিয়ে জোর করে সিল মারবে এবং গায়েবি মামলা দেবে এবং দেশছাড়া করবে।’
তিনি বলেন, এই অবস্থা বাংলাদেশে আর চলতে দেয়া যায় না। চলতে দেয়া যায় না বলেই আজকে বাংলাদেশের জনগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আজকে রাজপথে নেমেছে। দাবি একটা, এক পয়েন্টে, জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। এক দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু হচ্ছে। সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের কী অবস্থা হবে বুঝে নেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বিএনপির এই আন্দোলনের হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন না। গতবার বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও এবার তাও নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, কেউ নির্বাচনে না এলে তার কিছু করার নেই।
সরকার প্রধানের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আমান বলেন, ‘আজকে তারা আস্ফালন করছে যে, ওনাদের অধীনের নির্বাচন করতে হবে। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, তোমার এই খোয়াব ভুলে যেতে হবে। এই স্বপ্ন ভুলে যেতে হবে, বাংলাদেশে দলীয় সরকার প্রধান শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তাই আজকে সময়ের দাবি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ যাবে কোন পথে? ফয়সালা হবে রাজপথে।’
তিনি বলেন, ‘একটা ভোট চুরির সরকার, ভোটারবিহীন সরকার, আগের রাতের সরকার, নিশিরাতের সরকার, অবৈধ সরকার, অনৈতিক সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আজকে ক্ষমতায় চেপে বসেছে। তার ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার নেই। যেহেতু যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়।
‘এই দেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। জোর করে তাকে ক্ষমতায় আনতে কোনো নির্বাচন করতে দেবে না বাংলাদেশের জনগণ।’
বিএনপির কর্মসূচিতে কয়েকজনের প্রাণহানির বিষয়টি উল্লেখ করে বিএপি নেতা বলেন, “ইতোমধ্যে পাঁচজন রক্ত দিয়েছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা বলেছেন, ‘আমাদের রক্তের ঋণ তখনই শোধ হবে যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে, যখন জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে’।“পাঁচজন কেন যদি পাঁচ হাজারও শহীদ হতে হয় এই দেশে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।”