হবিগঞ্জ শহরের একটি হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুর কারণ ও প্রসূতির চিকিৎসার বিষয়ে কোনো তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন শিশুর বাবা।
তিনি জানান, পর্দা করেন বলে চিকিৎসক তার সঙ্গে কথা বলতে চাননি। নিউজবাংলার প্রতিবেদকের সঙ্গেও পর্দা করেন বলে কথা বলেননি চিকিৎসক উম্মে কাসমিরা জাহান।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শিশুটি গর্ভে থাকা অবস্থাতেই মারা গেছে।
এ ঘটনা ঘটেছে জেলা শহরের দ্যা জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে।
প্রসূতি ফেরদৌস বেগমকে রোববার গভীর রাতে এই হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বামী বানিয়াচং ৩ নম্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রসবব্যথা ওঠায় রোববার রাত ৩টার দিকে আমার স্ত্রীকে নিয়ে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার জানায় তার জরুরিভাবে সিজার করতে হবে। সে জন্য তাকে আবার রাতেই জাপান বাংলাদেশ হাসপাতালে আনি।
‘সিজারের আগে আল্ট্রাসোনোগ্রাম করার কথা থাকলেও ওই হাসপাতালে তা করেনি। এমনকি আমার স্ত্রীর বিষয়ে সিজার করা ডাক্তার উম্মে কাসমিরা জাহানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তিনি পর্দা করেন, তাই কোনো পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন না। এর আধা ঘণ্টা পর এসে একজন নার্স আমাকে আমার স্ত্রীর কাছে নিয়ে যান। আমার মৃত সন্তানকে দেখান। সন্তানের মাথা কিছুটা কাটাও ছিল।’
হাবিবের অভিযোগ, এতকিছুর পরও চিকিৎসকের সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারছেন না।
তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর অবস্থা কেমন বা তারা এখানে চিকিৎসা করতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে আমাদেরকে কিছুই বলেনি। উল্টো কয়েকবার একটি সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিতে চেয়েছে।
‘আমার সন্তান তো গেলই, আমার সুস্থ-সবল স্ত্রীকে কাটা-ছেঁড়া করেছে। আমার সন্দেহ আছে ডাক্তার উম্মে কাসমিরা সিজার করছেন নাকি নার্সরা করেছে। এ ব্যাপারে ডা. কাসমিরার সঙ্গে কথাও বলতে দিচ্ছে না।’
হাবিব জানান, সোমবার দুপুর পর্যন্ত চেষ্টা করেও তিনি ডা. কাসমিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চিকিৎসক উম্মে কাসমিরা জাহানের ভিজিটিং কার্ডে থাকা নম্বরে কল দিলে তার স্বামী ডা. রেজাউল করিম রিসিভ করেন। তিনি জানান, কাসমিরা পর্দা করেন। তাই তিনি কোনো পুরুষের সঙ্গে কথা বলবেন না।
তাহলে রোগীর বিষয়ে তথ্য স্বজনরা কীভাবে জানবে? জবাবে রেজাউল বলেন, ‘রোগীর আপডেট থাকলে সে (ডা. কাসমিয়া) রোগীর সঙ্গে থাকা নারীকে দেয়। নারী না থাকলে নার্সকে দিয়ে দেয়।’
হাসপাতালের চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘রোগীকে নিয়ে আসার অন্তত দুইদিন আগেই শিশুটি মারা গিয়েছিল। আমাদের এখানে কোনো ভুল চিকিৎসা হয়নি।
‘শিশুটি দুইদিন আগে মারা যাওয়ায় তার শরীর অনেক নরম হয়ে গেছিল। যে কারণে সিজারের সময় মাথায় একটু ফেটে যায়।’
চিকিৎসক কেন রোগীর বিষয়ে তথ্য তার স্বামীকে জানাচ্ছেন না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘তিনি (চিকিৎসক) পর্দা করেন। তাই কোনো পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন না। এতে আমাদের কী করার আছে? আমরা তো আর উনার পর্দার বিষয়ে কথা বলতে পারি না।’
জেলা সিভিল সার্জন মো. নূরুল হক বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’