বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জুমের ধানে পাহাড়িদের হাসি

  •    
  • ৩ অক্টোবর, ২০২২ ১৫:৫২

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, রাঙামাটি সদর উপজেলাসহ ১০ উপজেলায় ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে জুমের ধান আবাদ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিলাইছড়ি, বরকল ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় এবার জুম ধানের আবাদ হয়েছে বেশি।

রাঙামাটির উঁচু-নিচু পাহাড়ে উৎপাদিত জুমের ধান কাটা শুরু করেছেন চাষিরা। পাহাড়িদের জীবিকার অন্যতম প্রধান অবলম্বন জুম চাষ। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয়ে নভেম্বর পর্যন্ত চলে জুমের ধান কাটার উৎসব।

এ সময়ে ব্যস্ত থাকেন আদিবাসী নারীরা। দীর্ঘ ৯ মাসের পরিশ্রমের বিনিময়ে ফলানো পাকা সোনালি ধান কেটে ঘরে তোলার ব্যস্ততায় থাকেন তারা। জুমে উৎপাদিত পাকা ধানে মুখর হয়ে ওঠে জুমিয়াদের ঘর। যেন পাহাড় খুঁড়ে ঘরে তোলা হচ্ছে মূল্যবান সোনা। একদিকে সোনালি ধান, অন্যদিকে চাষিদের মুখে হাসি যেন পরিপূর্ণতা পায় পাহাড়ের জনপদ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, রাঙামাটি সদর উপজেলাসহ ১০ উপজেলায় ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে জুমের ধান আবাদ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিলাইছড়ি, বরকল ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় এবার জুম ধানের আবাদ হয়েছে বেশি।

গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধানের উৎপাদন কম হয়েছে বলে জানান রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তপন কুমার পাল।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, পাহাড় থেকে জুমের ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলছেন চাষিরা। সোনালি ধান ঘরে তুলতে সবারই ব্যস্ততা। ধানের সঙ্গে তাদের মুখে ফুটেছে হাসি।

আগে পাহাড়ে বসবাসরত পাহাড়িদের জীবিকার প্রধান অবলম্বন ছিল জুম চাষ। জুম এক ধরনের স্থানান্তরিত কৃষিপদ্ধতি। পৌষ ও মাঘ মাস এলেই পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল সাফ করা হয়। ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে শুরু হয় জুমের জন্য প্রস্তুত করা জঙ্গল পোড়ানোর কাজ। প্রচণ্ড রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়িয়ে প্রস্তুত করা হয় জুমক্ষেত। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে জুমচাষিদের ব্যস্ততা আরও বাড়ে।

এ সময় হিড়িক পড়ে আগুনে পোড়ানো জুমের মাটিতে বিভিন্ন বীজ বপনের। সুচালো দা ও কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে বপন করা হয় বীজ।

শুধু ধান নয়, ধানের পাশাপাশি তুলা, শিম, মারফা, তিল, চিনার, বেগুন, মরিচ, কুমড়া, ঢেঁড়স, কাঁকরোল, আখ, ভুট্টাসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল-শাক-সবজি ফলান চাষিরা।

জুম চাষ চাকমা জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে যাচ্ছে। যদিও বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি ঘুরে দেখা গেছে, রাঙামাটির তুলনায় ওই দুই পার্বত্য জেলায় জুম হিসেবে ব্যাপক ধান চাষ করা হয়েছে।

বান্দরবানে দেখা গেছে, চিম্বুক পাহাড়, নীলগীরি, থানচি যাওয়ার আঁকাবাঁকা পথজুড়ে পাকা সোনালি রঙের ধান উঁকি দিচ্ছে চাষিকে। জুমের চারপাশ যেন মনে করিয়ে দেয় আদিবাসীদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

জুমঘরে মাচাং ঘর বানিয়ে ধান মাড়াই করে ধান সংগ্রহ করছেন চাষিরা। এসব এলাকায় জুম চাষ করে থাকে ম্রো জনগোষ্ঠী। তাদের এ ব্যস্ততা যেন দ্বিগুণ বেড়েছে।

যেসব এলাকায় ধানের পাশাপাশি মিষ্টিকুমড়া বেশি চাষ হয়, সেসব তোলা ও বাজারে নেয়ার কাজ করছেন চাষিরা।

এসব সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।

বরকল উপজেলার ৩ নম্বর আইমাছড়ার সাইচালপাড়ার জুমচাষিরা তুলছেন ধান।

ধানের পাশাপাশি মারুফা, বেগুন, হলুদ, ভুট্টা, মরিচ, কুমড়া, ঢেঁড়স, কাঁকরোল বেশ ভালো ফলন পেয়েছেন তারা।

ওই পাড়ার জুমচাষি জ্ঞান জ্যোতি চাকমা বলেন, ‘অন্য উপজেলায় এ বছর ধানের উৎপাদন কম হলেও বরকল উপজেলার আইমাছড়ায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের পাশাপাশি পাহাড়ি শাক-সবজির উৎপাদন অনেক বেশি।’

সদর উপজেলার সাপছড়ির নয়ন শোভা চাকমা বলেন, ‘এ বছর জুমে ধান, মারফা, হলুদ ও ভুট্টা চাষ করেছি। ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে। তবে ঠিক সময়ে যদি বৃষ্টিপাত হতো, আরও বেশি ফলন হতো।’

মগবান এলাকার সাধন চাকমা বলেন, ‘জুমের মাটির অনুকূল পরিবেশ ও আবহাওয়ার উপযুক্ত হওয়ায় ধান ও শাক-সবজির ফলন বেশি হয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত সঠিক সময়ে হলে ফলন আরও হতো।’

বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমে উৎপাদিত ধান ও শাক-সবজির উৎপাদন কিছুটা কম হতে পারে বলে জানান রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তপন কুমার পাল।

তিনি বলেন, ‘এবার রাঙামাটিতে প্রায় ৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টন। তবে চাষিদের ধান কাটা এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। ধান কাটা শেষ হলে জানা যাবে জুমের ধানে বাম্পার ফলন হয়েছে কি না।’

এ বিভাগের আরো খবর