হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালিয়ে একটি শক্তি ভারতকে ভিন্ন বার্তা দিতে চায় বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা নির্বাচন সামনে রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে ভারত সরকারকে বার্তা দিতে চায় যে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ না। কিন্তু তা হতে দেয়া হবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে পূজায় মন্দিরে হামলা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রোববার রমনা কালীমন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজার মণ্ডপ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মাঝেমধ্যে দুর্গাপূজা দুর্বৃত্তদের দ্বারা টার্গেট হয়েছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে, কুমিল্লা শহরে, রংপুরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন সামনে রেখে একটি অশুভ চক্র আছে, যারা হিন্দুদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ভারত সরকারকে জানিয়ে দিতে চায়- এ কাজটা আওয়ামী লীগ করেছে।
‘আওয়ামী লীগের হাতে মাইনরিটি নিরাপদ নয়- এটা মেসেজ দিতে চায়। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা নির্বাচন সামনে রেখে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালিয়ে ভারত সরকারকে মেসেজ দিতে চায় যে আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ না।’
ওবায়দুল কাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অভয় দিয়ে বলেন, ‘আপনারা ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সতর্ক আছে, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কাদের এ সময় বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান, শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মকর্ম করতে দিন। সংলাপ করছেন করুন। এটা আপনাদের নিজেদের ব্যাপার। কিন্তু আমি বলব দুর্গোৎসব-দশমী পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দল হিসেবে আপনাদেরও ভূমিকা আছে। আপনারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিও করব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবে সহযোগিতাও করব।’
অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার একাধারে ১৩ বছর ক্ষমতার মঞ্চে আসীন আছে। এই ১৩ বছরে ১৩টি দুর্গাপূজা হয়েছে। ৩০ হাজার পূজামণ্ডপ হয়েছে। এবার ৩২ হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ। আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই ১৩ বছরে মাত্র একটিবার দুর্গাপূজা সহিংসতার টার্গেট হয়েছে।
‘একাধারে ১১টি দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে হয়েছে। কিন্তু গতবার দুর্ভাগ্যজনক কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। গত বছর দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ হবে- এ রকম চিন্তাভাবনা থেকে সতর্কতার কিছুটা অভাব ছিল। কোথাও কোথাও রাজনৈতিকভাবে আমরা অসতর্ক ছিলাম, এ কথা সত্য। চৌমুহনী ছিল ভয়াবহ অবস্থা। একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানায়।’
এবার সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলছি, সারা বাংলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রস্তুত আছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় আছে। তাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সক্রিয় সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।’
‘যারা আপনাদের ওপর হামলা চালায়। তারা কোনো দলের নয়। তারা দুর্বৃত্ত। এই দুর্বৃত্তরা যে দলেরই হোক, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। তাদের কঠিন শাস্তি দিতে হবে। বিচার না হলে প্রশ্রয় পাবে। তাদের ব্যাপারে আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বিচার হবে। বাংলাদেশের সব অপরাধীর বিচার শেখ হাসিনা করেছেন। এমনকি নিজের দলের লোকেরাও রেহাই পায়নি’, বলেন কাদের।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ মহানগর ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা।
রমনার আগে ওবায়দুল কাদের রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন।