বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এক গ্রামে ১২ হাজার টন সবজি

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২২ ০৮:৫৯

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার নাছরুল মিল্লাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের মৎস্য ঘেরের পাড়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি বীজ সরবরাহ করা হয়।’

মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, বেগুন, করলাসহ হরেক রকম সবজির ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত কৃষকরা। সবজি তোলা, সেগুলো বাছাই করে বাজারে নিয়ে যেতেই ব্যস্ত কেউ কেউ। কেউ আবার সবজির পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মাশকাটা ধনপোতা গ্রামের কৃষকরা।

গ্রামটি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নে। গ্রামটিতে বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজার টন সবজি। আর এগুলো বিক্রি হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারে। এখান থেকেই বছরে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫ কোটি টাকার সবজি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের ধনপোতা, খরিবনিয়া, চাকুলি ও কুমারখালী বিল। এই চার বিলের ১৪০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, শসা, বেগুন, করলা, তরমুজ, বাঙ্গিসহ নানা জাতের সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন স্থানীয় চার শতাধিক কৃষক।

মৎস্য ঘেরের পাড়ে উৎপাদিত এসব সবজিতে কোনো প্রকার রাসায়নিক, কীটনাশক ও সার দেয়া হয় না। প্রাকৃতিক বালাইনাশক ও জৈব সার ব্যবহার করে এসব সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে বলে জানান এখানকার কৃষকরা।

ধনপোতা গ্রামের কৃষক জীবন পাল বলেন, ‘আমাদের এই গ্রামের আশপাশের চারটি বিলে আমরা চার শতাধিক কৃষক মৎস্য ঘেরে মাছ ও সবজি চাষ করি। আমরা মাছের ঘেরে লাইলে সবজি চাষ করার কারণে সবজিতে কোনো কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ব্যবহার করি না। কারণ এ ধরনের কীটনাশক বা সার পানিতে পড়লে মাছ মারা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি সবজির পাইকারি ব্যবসাসহ নিজের জমিতে উৎপাদিত সবজি ঢাকা, কুমিল্লা, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার আড়তে বিক্রি করি। এই সবজি বিক্রির টাকা দিয়েই আমি একটি বাড়ি করেছি ও একটি মোটরসাইকেল কিনেছি। সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে আমার আয় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা।’

একই গ্রামের কৃষক বাসু দেব বলেন, ‘রাসায়নিক সারের বদলে আমরা ভার্মি কমপোস্ট ও জৈব সার এবং কীটনাশকের বদলে নীম পাতার রস দিয়ে প্রাকৃতিক বালাইনাশক স্প্রে করি। এ ছাড়া মেহগনি গাছের ফলের বিজ দিয়ে স্প্রে করা হয়। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে আমাদের চাষ করা প্রায় প্রতিটি সবজির ব্যাপক ফলন হচ্ছে। এতে আমাদের মাছের চেয়ে সবজিতে বেশি লাভ হচ্ছে।’

কৃষক মকবুল শেখ বলেন, ‘ফকিরহাট কৃষি অফিস থেকে আমাদের গ্রামের চার শতাধিক কৃষককে বিভিন্ন সময় মাছের ঘেরে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কৃষি অফিসার এসে আমাদের হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। কৃষি অফিস থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে উচ্ছ ফলনশীল বীজ। সব মিলিয়ে সবজি চাষে আমাদের ভাগ্য বদলে গেছে। গ্রামের প্রতিটি মানুষই এখন স্বাবলম্বী। কেউ বেকার বসে নেই।’

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার নাছরুল মিল্লাত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের মৎস্য ঘেরের পাড়ে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি বীজ সরবরাহ করা হয়।

‘এর সুফল হিসেবে বছরে চারটি বিল থেকেই উৎপাদিত হচ্ছে ১২ হাজার টন সবজি। যার বাজার মূল্য ৫ কোটি টাকারও বেশি।’

তিনি জানান, পদ্মা সেতুর সুবাদে পাইকার সবজি ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করছেন। ধনপোতা গ্রামের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে সবজির পাইকারি হাট। কৃষকরা ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করে ওই স্থানগুলোতে রাখেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা ট্রাক করে সবজি কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।

ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফকিরহাট উপজেলাকে কৃষিতে সমৃদ্ধ একটি উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ কাজ করছে। কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে। আশা করছি ধনপোতা গ্রামের কৃষকদের দেখে অন্য কৃষকরাও বিষমুক্ত সমন্বিত কৃষিতে আগ্রহী হবেন।’

এ বিভাগের আরো খবর