এবার পূজামণ্ডপে কোনো শঙ্কা নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, ‘দুর্গাপূজায় কুমিল্লার মতো ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য এবার পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রত্যেক মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা ও স্বেচ্ছাসেবক রাখতে বলা হয়েছে। পূজার নিরাপত্তায় সরকার কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এ বছর পূজামণ্ডপে কোনো শঙ্কা থাকবে না আশা করি।’
শুক্রবার বিকেলে ভোলার লালমোহনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে শেখ হাসিনা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ সবাইকে নিয়ে এ দেশ, সবার রক্তে রঞ্জিত এ দেশ। আমারা সবাইকে নিয়ে চলব। উৎসব সবার, ধর্ম যার যার। এ ধারা অব্যাহত থাকায় আমরা সবাই এগিয়ে চলছি। এগিয়ে যাওয়ার সৈনিক হিসেবে সবাই কাজ করছে বলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ আমাদের রুখতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনা যতদিন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন, ততদিন দেশ আলোকিত থাকবে। তার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস, জঙ্গি, মাদকমুক্ত দেশ গড়তে চাচ্ছেন। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব কুমার হাজরা।
উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মেজবাহ উদ্দিন, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান, ভোলার জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই-লাহী চৌধূরী।
খেলায় কালমা ইউনিয়নকে ৩-২ গোলের ব্যবধানে পরাজিত করে ধলী গৌরনগর ইউনিয়ন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। লালমোহন উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও নুরুন্নবী চৌধুরী ক্রীড়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ টুর্নামেন্টের আয়োজন করে।
দেবীর আগমন শনিবার
ষষ্ঠীতে বোধনের মধ্য দিয়ে শনিবার শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। গত দুই বছরে করোনা মহামারির বিবর্ণ সময় ও সর্বশেষ পূজায় কুমিল্লায় সহিংসতাকে উতরে এবারের দুর্গোৎসব জমজমাট করতে সারা দেশে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
গতবারের চেয়ে এ বছর বেড়েছে মণ্ডপের সংখ্যা, জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেবীবন্দনায় পুরোপুরি প্রস্তুত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী মর্ত্যে আসছেন গজে (হাতি) চেপে। গজ বা হাতিতে চড়ে দেবীর আগমনের অর্থ হলো শুভ। মনে করা হয়ে থাকে, দেবী যদি গজে চড়ে মর্ত্যে আসেন, তাহলে তিনি সঙ্গে করে সুখ-সমৃদ্ধি নিয়ে আসেন। হাতি হচ্ছে জ্ঞান এবং সমৃদ্ধির প্রতীক।
আর ৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দেবী মর্ত্য ছাড়বেন নৌকায় চড়ে। নৌকায় মনোকামনা পূর্ণ হওয়া বোঝানো হয়। ধরিত্রী হয়ে ওঠে শস্য-শ্যামলা। কিন্তু সেই সঙ্গে অতিবর্ষণ বা প্লাবনের আশঙ্কাও দেখা যায়।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, শনিবার মহাষষ্ঠীর সকালে হবে দুর্গাদেবীর ষষ্ঠ্যাদি কল্পারম্ভ এবং ষষ্ঠিবিহিত পূজা, সন্ধ্যায় হবে দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস।
রোববার মহাসপ্তমীবিহিত পূজা, সোমবার মহাষ্টমীবিহিত পূজা, মঙ্গলবার মহানবমীবিহিত পূজা এবং বুধবার দশমীবিহিত পূজা সমাপন ও প্রতিমা বিসর্জন হবে।
পূজা উদযাপন পরিষদের হিসাবে দেশে এবার প্রায় ৩২ হাজার ১৬৮ মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এই সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৫০টি বেশি। ঢাকা মহানগরে এবার পূজা হবে ২৪১টি মণ্ডপে, যা গতবারের চেয়ে ছয়টি বেশি। গতবার সারা দেশে পূজামণ্ডপের সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ১১৮টি।
গত বছর সারা দেশে ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে শারদীয় উৎসব শুরু হয়। সার্বিক পরিস্থিতিও ছিল সন্তোষজনক। এর মধ্যে কুমিল্লায় একটি মন্দিরে হনুমান মূর্তির পায়ের কাছে মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন শরিফ রাখার মতো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তা প্রাণঘাতী অবস্থায় রূপ নেয়। সহিংসতায় নিহত হন পাঁচজন। ওই সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাও ঘটে। হুমকিতে পড়ে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি।
এ বছরের মণ্ডপগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির স্বার্থে মণ্ডপকেন্দ্রিক সিসিটিভি ক্যামেরাও বসছে। তবে গ্রামের মণ্ডপগুলোতে এই নিরাপত্তা সুবিধা থাকছে না।
পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এবার আশাবাদী। সরকার আন্তরিক, প্রশাসনও আন্তরিক। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি আছে।
‘সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছি। সব মণ্ডপে নজরদারির ব্যবস্থাটা রাখতে বলা হয়েছে। এবার সব মন্দিরে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা ২৪ ঘণ্টা পাহারায় থাকবেন।’